দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান - لا إله إلا الله محمد رسول الله

আপডেট তথ্য

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, February 12, 2018

দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান

প্রশ্নঃ ১। ফাসেক ব্যক্তির পিছনে নামাজ হবে কিনা? 


উত্তর: ফাসিক ব্যক্তির পিছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী৷
إن إمامةالفاسق مكروه تحريما. (طحطاوي علي المراقي ص ٢٤٤)
"ফাসিক ব্যক্তির ইমামতি মাকরূহে তাহরীমী৷" ( তাহত্বাভী পৃ: ২৪৪)
তবে যে মসজিদে ফাসিক ও বিদআতী ইমাম থাকবে, এবং অন্য মসজিদে গিয়ে সুন্নাতের পাবন্দ মুত্তাকী ইমাম সাহেবের পেছনে নামায পড়ারও সুবিধা থাকবে না, এমতাবস্থায় জামাআত ত্যাগ না করে এই ইমামের পেছনে নামায পড়লে নামায আদায় হবে৷ জামাআতের সওয়াবও পাওয়া যাবে৷ ইমামের ফাসেকী ও বিদআতের কারণে ওই ইমাম ও মসজিদের কমিটি দায়ী হবে৷ তবে হেকমতের মাধ্যমে ইমাম সাহেবকে শোধরানোর চেষ্টা করতে হবে৷
صلي خلف فاسق أومبتدئ نال فضل الجماعة(قوله نال فضل الجماعة) أفاد أن الصلاة خلفها أولي من الإنفراد.
(ردالمحتار ١/٥٦٢)
মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ফাসিক ব্যক্তির পিছনে জামাআত পড়ার হুকুম হচ্ছে, যদি ইমাম হওয়ার যোগ্য আর কেউ না থাকে, তাহলে জামাত ত্যাগ না করে এই ব্যক্তির পিছনেই সালাত আদায় হবে৷ তবে যোগ্য কেউ থাকলে মাকরূহ হবে৷ শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ) সহ উলামায়ে কেরাম এরকম বলেছেন৷ (মজমূআ ফাতাওয়া ২৩/৩৫৫, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ১০/৯২)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানে মুফতি জিয়া রাহমান


প্রশ্নঃ ২। কুরআনে আছে, নিশ্চয়ই সালাত মুমিন ও কাফিরের মাঝে পার্থক্যকারী। এখন কেউ যদি নামাজে গাফেল থাকে তবে কি সে কাফির হয়ে যাবে? এমনও আছে আল্লাহ্‌ ﷻকে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েমেও বিশ্বাস করে। কিন্তু কায়েম করতে গাফিলতি করে, এদের পরিণতি কি?
প্রশ্ন করেছেনঃ তাঞ্জিম বিন মুহিউদ্দিন
উত্তর: হুবহু এরকম বক্তব্য পবিত্র কুরআনে নেই৷ তবে হাদীসে এসেছে-
عن جابر أن النبي صلى الله عليه وسلم قال بين الكفر والإيمان ترك الصلاة… قال أبو عيسى
هذا حديث حسن صحيح. (جامع الترمذي ٢٦١٨)
হযরত জাবির রা, থেকে বর্ণিত রাসূল ﷺ বলেন, কুফর এবং ঈমানের মধ্যকার পার্থক্য হচ্ছে, নামায ত্যাগ করা৷ (তিরমিযী, হাদীস নং- ২৬১৮)
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উলামায়ে কেরাম এব্যাপারে একমত যে, নামায ত্যাগসহ যেকোনো কবীরাহ গোনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না, তবে মারাত্মক গোনাহগার হবে৷ তাওবা করে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে কিংবা পরকালীন শাস্তি ভোগ করে জান্নাতে যাবে৷ আল্লাহ্‌ ﷻ তাআলা বলেন-
فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ. وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ. [سورةالزلزال:٧،٨].
"অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে, তা দেখতে পাবে৷ এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম তা-ও দেখতে পাবে৷"(সূরা যিলযাল ৭, ৮)
فَخَلَفَ مِنْ بَعْدِهِم خَلْفٌ أضَاعُوا الصلاةَ واتَّبَعُوا الشَّهَواتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيَّا. إلا مَنْ تاب وآمَنَ وعَمِلَ صَالِحاً فأولَئِكَ يَدْخُلُونَ الجنَّةَ وَلا يُظْلَمُونَ شَيْئاً (مريم٥٩،٦٠)
"অতঃপর তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা৷ তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হলো৷ সুতরাং তারা অচিরেই 'গাইয়ুন' নামক জাহান্নামের স্বাক্ষাত পাবে৷ কিন্তু যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, সুতরাং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের উপর কোনো জুলুম করা হবে না"৷ (সূরা মারইয়াম ৫৯, ৬০)
উপরে পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহের আলোচনা থেকে বুঝা গেলো, যারা কবীরাহ গোনাহে লিপ্ত হয়, নামায কাযা কিংবা ত্যাগ করে, তারা কাফির হয়ে যায় না৷ যেহেতু নামায কাযা করা, নামায ত্যাগ করা কবীরা গোনাহ, তাই যদি তাওবা করে পুনরায় নামাযের প্রতি মনোযোগী হয়ে যায়, গাফলতি থেকে ফিরে আসে, তাহলে তার জন্যে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত৷ নতুবা নির্ধারিত শাস্তি ভোগ করে একসময় জান্নাতে প্রবেশ করবেই৷
والله تعالى أعلم
উত্তর প্রদানেঃ মুফতি জিয়া রাহমান



৩। প্রশ্ন: যদি নামাজ ত্যাগের কারণে কাফের হয়ে যায়, তবে পুনরায় ইসলামে ফিরে আসতে কি করা উচিত?
প্রশ্ন করেছেনঃ তাঞ্জিম বিন মুহিউদ্দিন
উত্তর: নামাজ ত্যাগের কারণে কাফির হবে না৷ কেবল নামাজ অস্বীকার করলে কাফির হয়ে যাবে৷
عن عبادة بن الصامت رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله عليه وسلم يقول: خَمْسُ صَلَوَاتٍ افْتَرَضَهُنَّ اللَّهُ تَعَالَى، مَنْ أَحْسَنَ وُضُوءَهُنَّ وَصَلَّاهُنَّ لِوَقْتِهِنَّ، وَأَتَمَّ رُكُوعَهُنَّ وَخُشُوعَهُنَّ، كَانَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ أَنْ يَغْفِرَ لَهُ، وَمَنْ لَمْ يَفْعَلْ، فَلَيْسَ لَهُ عَلَى اللَّهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُ، وَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ.
(رواه أبو داود ٤٢٥، وأحمد ٢٢١٩٦)
"হযরত উবাদাহ ইবনুস সামিত রা, বলেন, আমি রাসূল সা,কে বলতে শুনেছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আল্লাহ তাআলা ফরয করেছেন৷ যে ব্যক্তি (সুন্নাহ পদ্ধতিতে) ভালোকরে ওযু করবে, সময়মতো নামায আদায় করবে, পরিপূর্ণরূপে রুকু করবে, পরিপূর্ণভাবে খুশু-খুযুর সঙ্গে নামায আদায় করবে; ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ আর যদি (নামায ঠিকমতো আদায় না করে) এমনটা না করে, তাহলে ওই ব্যক্তির জন্যে আল্লাহ তাআলার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই৷ আল্লাহ তাআলা চাইলে তাকে মাফ করে দিতে পারেন, আর চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন"৷ (আবু দাউদ ৪২৫, মুসনাদে আহমাদ ২২১৯৬)
"আল্লাহ তাআলা চাইলে মাফ করে দিতে পারেন, আর চাইলে শাস্তিও দিতে পারেন" হাদীসের এই অংশ থেকে বুঝা যায়, নামায ত্যাগকারী কাফির হয় না৷কাফির হলে মাফ করে দেয়ার কথা আসে না৷
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ মুফতি জিয়া রহমান



৪। প্রশ্ন: মৃত্যুর পর চল্লিশা করা বিদ'আত, তা জানা সত্ত্বেও অনেক ইমাম তাতে অংশগ্রহণ করেন। উনাদের পেছনে সালাত আদায় জায়েজ কি না?
প্রশ্ন করেছেনঃ তাঞ্জিম বিন মুহিউদ্দিন
উত্তর: আমাদের সামাজিক অবস্থা ইমাম সাহেবকে যেতে বাধ্য করে৷ অবশ্যই না যাওয়া উচিত৷ ইমাম সাহেবের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করা উচিত৷ তবে একান্ত বাধ্য হলে নিষেধের নিয়তে যেতে পারেন, তাদেরকে বুঝাতে পারেন হেকমতের সাথে৷ ইমাম সাহেবের পেছনে নামায সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কোনো সংশয় নেই৷ রাসূলুল্লাহ সা, এর হাদীস-
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال صلوا خلف كل بر وفاجر وصلوا على كل بر وفاجر
"হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত, রাসূল সা, বলেন, প্রত্যেক নেককার এবং বদকারের পিছনে নামায পড়। এবং প্রত্যেক নেককার এবং বদকারের জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করো।" (সুনানে দারা কুত্বনী: ২/৪০৪ হাদীস নং ১৭৬৮, সুনানে কুবরা লিল বাইহাক্বী: ৪/২৯ হাদীস নং ৬৮৩২)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানে মুফতি জিয়া রহমান



৫। প্রশ্ন: ফাসেক ইমাম বলতে কি বোঝায়? আমরা কোন ইমামকে ফাসেক বলব? আর ফাসেক ইমাম থেকে যোগ্য কেউ থাকলে আমরা আম-মানুষের করনীয় কী?
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ ইউনুস
উত্তর: যে কবীরা গোনাহে লিপ্ত হয়, কবীরাহ গোনাহে অভ্যস্ত হয়, ফরয-ওয়াজিব ত্যাগ করে; মোটকথা যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার আনুগত্য থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়, তাকে ফাসিক বলে৷ আবার খালিস তাওবার মাধ্যমে তার ফাসিকী চলে যায়৷ কেননা রাসূল সা, ইরশাদ করেন-
عن أبي عبيدة بن عبد الله بن مسعود عن أبيه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: التَّائِبُ مِنْ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.
(رواه ابن ماجة: ٤٢٥٠، والطبراني في المعجم الكبير: ١٠٢٨١)
"আপন গোনাহ থেকে তাওবাকারী এমনভাবে গোনাহমুক্ত হয়, যেন তার কোনো গোনাহই নেই৷" (ইবনু মাজাহ ৪২৫০)
যদি নিয়োগপ্রাপ্ত ইমাম হন, তাকে বুঝিয়ে বলবেন, সতর্ক করবেন৷ তারপরও কোনো পরিবর্তন না এলে তাকে ফাসেকী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে মসজিদ কমিটি শোকজ নোটিশের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগও করতে পারেন৷ যদি তারপরও সংশোধনী না আসে, তখন মসজিদ কমিটি এই ইমাম সাহেবকে সসম্মানে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিবেন৷
.والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ মুফতি জিয়া রহমান



৬। প্রশ্ন: বিয়ের বয়স সম্বন্ধে ইসলাম কি বলে?
উত্তর: এই লেখাটি পড়ুন৷ এরপরও যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বলবেন৷
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন-
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ.
(رواه الترمذي: ١٠٨٤ وابن ماجة: ١٩٦٧)
“তোমাদের নিকট যদি এমন পাত্র বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীনদারী ও চরিত্র তোমাদের নিকট পছন্দসই, তবে তার সাথে তোমাদের কন্যাদের বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তোমরা এরূপ না কর (দ্বীনদার ও চরিত্রবান পাত্রকে প্রত্যাখ্যান কর এবং তাদের সাথে কন্যাদের বিবাহ না দাও) তবে এর কারণে পৃথিবীতে অনেক বড় ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। (তিরমিযী: ১০৮৪, ইবনে মাজাহ: ১৯৬৭)
যদিও দুনিয়াদারী বা অর্থ-সম্পদের বিষয়টিকেও আমাদের বস্তুবাদী সমাজে উপযুক্ত হওয়ার শর্ত হিসেবে ধরে নেয়, কিন্তু তা মোটেও উপযুক্ততার মানদণ্ড হতে পারে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِنْ يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ.
(النور: ٣٢)
তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি সম্পদহীন, নিঃস্ব ও ফকীর হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা আন-নূর: ৩২)
এটাই হচ্ছে বিবাহের বরকত।
একজন মুসলিম বিয়ের আগে পরনারীর সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক করতে পারে না। কেননা এতে করে সে পৃথিবীতে কাঁদবে এবং পরকালেও কাঁদবে। কেননা এরূপ গুপ্ত প্রেম ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। ডিগ্রি, মাস্টার্স, ডক্টরেটের পড়াশুনা চলছে বিয়ে করতে পারছি না। প্রেম চলছে, পড়াশুনাও চলছে
এরূপ অবস্থা হলে অবশ্যই বিয়ে করা ফরয। বাবা-মায়ের এর জন্য অগ্রণী ভূমিকা নেওয়া উচিত। কেননা এর দ্বারা ছেলে যদি যিনার দিকে পা বাড়ায়
তবে তার ঈমান ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে, পরকাল বরবাদীর দিকে চলে যাবে।
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কুরআনে বলছেন-
ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻲ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻜِﺢُ ﺇِﻟَّﺎ ﺯَﺍﻧِﻴَﺔً ﺃَﻭْ ﻣُﺸْﺮِﻛَﺔً ﻭَﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻴَﺔُ ﻟَﺎ ﻳَﻨﻜِﺤُﻬَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﺯَﺍﻥٍ ﺃَﻭْ ﻣُﺸْﺮِﻙٌ ۚ ﻭَﺣُﺮِّﻡَ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ
"ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা
হয়েছে…" (সূরা আন-নূর: ৩)
এই আয়াতে ব্যভিচারিকে আল্লাহ্ মুশরিকের সাথে তুলনা করেছেন৷ অর্থাৎ ব্যভিচারি ব্যক্তি মুশরিকদের মতো হয়ে যায়। পরকালের জন্য বিষয়টি অনেক গুরুতর৷ যদিও পৃথিবীতে মানুষ এর গুরুত্ব দেয় না বললেই চলে। ভাল চাকুরী করে না, বিয়ে কিভাবে করবে? ভাল চাকুরী পাওয়া হয় না, বিয়ে করাও হয় না। আর বয়স দিন-দিন বেরেই যাচ্ছে। ফিতনার সম্মুখীন হচ্ছে বারেবারেই। এই পরিস্থিতিতে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
কমিয়ে, সাধারণ একটি মেয়েকে বিয়ে করাই হচ্ছে উত্তম কাজ। কেননা যে মেয়ে একজন ছেলের বর্তমান পরিস্থিকে মেনে নিয়ে সুখী জীবন যাপন করতে পারে, সেই আদর্শ নারী। বিদেশে থাকে, ডেটিং করে, ক্লাবে যায় বিয়ের কী দরকার?…বাবা-মায়ের তাদের সন্তানের দিকে লক্ষ্য
রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তাদের বিবাহের জন্যে বাবা-মা বাধা না হয়ে বরং উদ্যোগী হয়ে তাদেরকে বিয়ে করিয়ে মরণপথ থেকে ফিরিয়ে আনা তাদের নৈতিক ও শরীয়ত কর্তৃক আরোপিত দায়িত্ব৷ কেননা তারা মরণ রাস্তায় পা বাড়িয়েছে। এরূপ অবস্থান থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে আনা তাদের কর্তব্য। আর একজন মুসলিম
হিসেবে সেপথ থেকে ফিরে আশা ফরয৷
রাসুল (সা,) দ্রুত বিবাহের জন্য উৎসাহ প্রদান করে বলেন:
يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج
"হে যুবকের দল! তোমাদের মধ্যকার যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিবাহ করে নেয়।" (বুখারী-৫০৬৫, মুসলিম-১৪০০, আবু দাউদ-২০৪৬, নাসায়ী-২২৪০৷
তাই সামর্থ্য থাকলে দ্রুত বিবাহ করে নেয়াই রাসূলের তরীকা এবং এই বিয়েই হচ্ছে, নিজেকে চারিত্রিক ধ্বংসের হাত রক্ষার প্রধান রক্ষাকবচ৷
নিজের চারিত্রিক নিষ্কলুষতা রক্ষায় যখন কেউ বিয়ের উদ্যোগী হবে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন৷ এটা আল্লাহ তাআলার কর্তব্য হয়ে যায়৷ দেখুন, হাদীসে এসেছে-
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاثة حق على الله عونهم المجاهد في سبيل الله والمكاتب الذي يريد الأداء والناكح الذي يريد العفاف. قال أبو عيسى هذا حديث حسن .
(رواه الترمذي: ١٦٥٥ وغيرهم)
হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন ব্যক্তির সাহায্য করা আল্লাহ তাআলার জন্যে কর্তব্য হয়ে পড়ে। তারা হলো: ক. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী খ. যে দাস নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করে দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় গ. যে লোক বিয়ে করে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা রক্ষা করতে চায়।’’ (তিরমিযী: ১৬৫৫)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ মুফতি জিয়া রহমান


৭। প্রশ্ন: নামাযের মধ্যে উভয় তাশাহুদ (আত্তাহিইয়াতু) তে আশহাদু বলার সময় শাহাদাত (তর্জনী) আঙ্গুলি উপরে তুলে ইশারা করা এবং ইল্লাল্লাহ বলার সাথে সাথেই নামিয়ে ফেলা। আবার কেউ কেউ শাহাদাত আঙ্গুলি না নামিয়ে নারতে থাকেন (এর সমাধান কি)?
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ রুবেল
উত্তর: তাশাহহুদ পড়ার শেষের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা রাসূল সা, থেকে প্রমাণিত। তাই এ আমলটি সুন্নত। সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে কেবল আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা প্রমাণিত। আঙ্গুল নাড়ানো নয়। যারা আঙ্গুল নাড়ানোর কথা বলেন, তাদের বক্তব্যটি বিশুদ্ধ নয়। দেখুন রাসূলুল্লাহ সা, এর হাদীস-
عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا قَعَدَ يَدْعُو وَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُمْنَى وَيَدَهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ وَوَضَعَ إِبْهَامَهُ عَلَى إِصْبَعِهِ الْوُسْطَى وَيُلْقِمُ كَفَّهُ الْيُسْرَى رُكْبَتَهُ
"হযরত আমির ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল সা, যখন তাশাহহুদ পড়ার জন্য বসতেন, তখন ডান হাতখানা ডান উরুর উপর এবং বাঁ হাতখানা বাঁ উরুর উপর রাখতেন। আর শাহাদত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলিকে মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন এবং বাঁ হাতের তালু [বাঁ] হাঁটুর রাখতেন।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৩৬, সহীহ ইবনে হিব্বান-৫/২৭০)
উল্লেখিত হাদীসে শুধুমাত্র আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার কথা এসেছে। আঙ্গুল নাড়ানোর কথা আসেনি। কিন্তু আঙ্গুল নাড়বে কি না? এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। অন্য হাদীসে তাও স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। যেমন-
عن عبد الله بن الزبير أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يشير بأصبعه إذا دعا ولا يحركها.
হযরত আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের রা, থেকে বর্ণিত। রাসূল সা, যখন তাশাহহুদ পড়তেন, তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াতেই থাকতেন না। (সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৯৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৯৮৯, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১৫৯৪
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ মুফতি জিয়া রহমান





No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages