দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান - لا إله إلا الله محمد رسول الله

আপডেট তথ্য

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, February 14, 2018

দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান

ইসলামী আকীদা বলতে কী বুঝায় এবং এর গুরুত্ব কতটুকু?



প্রশ্ন: আমরা ছোটবেলা থেকেই আলহামদুল্লিলাহ কোরআন পড়া শিখেছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, সৎ পথে থাকার চেষ্টা করি..। এরপরও কি আমাদের জন্য আকীদা জানা খুবই জরুরি? বা আকিদা সম্পর্কে জানার ফজিলত কি তা জানতে চাই।
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
উত্তর:
নামায-রোযা, ইবাদত-বন্দেগী করার পরও আকীদা জানা জরুরি কি না এ বিষয়টি জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে আকীদা বলতে কী বুঝায় বা আকীদা কাকে বলে? তারপর জানতে হবে এর গুরুত্ব কতটুকু?

🔷 আকীদা বলতে কী বুঝায়?
আকীদা শব্দের অর্থ হল,মানুষ যা বিশ্বাস করে বা মেনে চলে। আকীদা ও ঈমান একই অর্ধবোধক। অর্থাৎ বিশ্বাসের অপরনাম আকীদা। সুতরাং আকীদার গুরুত্ব কতটুকু তা সহজেয় অনুমেয়।

এ সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল ফাউযান রাহ. বলেন:

“ইসলামী আকীদা হল, সেই চেতনা ও বিশ্বাসের নাম যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা নবী-রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। নাযিল করেছেন অনেক আসমানী কিতাব। শুধু তাই নয় বরং তিনি সমগ্র মানুষ ও জিন জাতির উপর সেই বিশ্বাস পোষাণ করা অপরিহার্য করেছেন।

🔸যেমন আল্লাহ বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ
“এবং আমি জিন ও মানুষ জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন জীবিকা চাইনা এবং চাইনা যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক।” (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬-৫৭)
🔸 তিনি আরও বলেন:
وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ
“এবং তোমার প্রতিপালক চূড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।” (সূরা ইসরাঃ ২৩)
🔸 তিনি আরও বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
“এবং আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (তথা আল্লাহ ছাড়া যে সকল জিনিসের ইবাদত করা হয়) সেগুলো থেকে দূরে থাক।” (সূরা আন নাহল: ৩৬)
উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সমস্ত নবী-রাসূল এ আকীদার আহবান নিয়ে পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন। সমস্ত আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল এ আকীদারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য এবং এর বিপরীত সকল বাতিল বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করার জন্য।
সৃষ্টি জগতের মধ্যে যাদের উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হয় তাদের প্রত্যেককে এই আকীদা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং যে বিষয়টির এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করার। কারণ,এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে। আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا
অর্থঃ “সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুতভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।” (সূরা বাকারাঃ ২৫৬) একথার মানে হল, যে এ আকীদা হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গোমরাহী ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারেনা।
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ
অর্থঃ তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তো প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত । (সূরা হজ্জঃ ৬৩)”
[উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]

🔷 আকীদার গুরুত্ব কতটুকু?

ঈমান-আকীদা শুদ্ধ না হলে নামায-রোযা সহ কোন ইবাদই আল্লাহর নিকট গ্রহনীহ হবে না। যেমন কেউ যদি শিরকী আকীদা পোষণ করে তাহলে যত ইবাদতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“যদি শিরক করো তবে তোমার সকল আমল নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে।” (সূরা যুমার: ৬৫)
ঈমান, ইখলাস ও রাসুল সা. এর অনুসরণ (যুগুলো আকীদার মূল ভিত্তি) এর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকবে আখিরাতে সকল নেককাজ ধুলিকনার মত অর্থহীন হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا
“আমি তাদের কৃতকর্মের নিকট আগমন করে সেগুলোকে উৎক্ষিপ্ত ধুলিকণায় পরিণত করব।” (সূরা ফুরকান ২৫)
🔷 সঠিক আকীদা সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জনের আবশ্যকতা
জেনে রাখুন, (আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদরেকে তাওফীক দান করুন) ইসলামী আকীদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আকীদা বলতে কী বুঝায়, আকীদার উপর আর কী কী জনিসি নির্ভর করে, বিপরীত আকীদাগুলো কী কী, কী কারণে আকীদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যমেন বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বষিয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অরহার্য।
আল্লাহ বলেন:
فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ
“অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তোমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”
ইমাম বুখারী রাহ. সহীহ বুখারীতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবেঃ
بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ
“অধ্যায়ঃ কথা বলা এবং আমল করার আগে জ্ঞানার্জন করা।”
এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন।
[উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইসলামী আকীদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারলাম।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হল যে, ঈমান ও আকীদা সঠিক না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নেক আমলের কোনই মুল্য নাই। তাই আমল সংশোধনের পূর্বে আকীদা সংশোধ করা এবং সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক। আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

লিসান্স, মদীনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব







No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages