(প্রশ্নটি করেছেন: নাঈম আজাদ)
উত্তর: এরকম কোনো ফযীলতের কথা জানা নেই৷ তবে আরবী বছরের শেষ মাস অর্থাৎ যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশক খুবই ফযীলতের৷ আল্লাহ তায়ালা এই মাসের প্রথম দশকের রাতের কসম করে পবিত্র কুরআনে সূরা নাযিল করেছেন৷ ইরশাদ হয়েছে:
والفجر، وليال عشر.
"শপথ ভোরবেলার, শপথ দশ রাত্রির।" (সূরা আল-ফাজর: ১-২)
হাদীস শরীফে এই দশককে দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম ও মর্যাদাবান দশক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أفضل أيام الدنيا العشر، يعني عشر ذي الحجة، قيل ولا مثلهن في سبيل الله؟ قال : ولا مثلهن في سبيل الله، إلا رجل عُفِّر وجهه بالتراب.
"দুনিয়ার সর্বোত্তম দিনগুলো হল যিলহজ্বের দশ দিন। জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর রাস্তায়ও কি তার সমতুল্য নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায়ও তার সমতুল্য নেই, তবে ঐ ব্যক্তি, যার চেহারা ধূলিযুক্ত হয়েছে, অর্থাৎ শাহদাতের মর্যাদা লাভ করেছে।" (মুসনাদে বাযযার: ১১২৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ২০১০)
প্রশ্নকর্তার নতুন জিজ্ঞাসা:
উল্লেখিত ১০ রাতের বিশেষ কোন আমল আছে কি?
উত্তর: হ্যাঁ এই দশকে ফযীলতপূর্ণ বিশেষ কিছু আমল রয়েছে৷ যেমন: যিনি কুরবানী করবেন, তার জন্যে যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে নিয়ে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত নখ, চুল, গোফ ইত্যাদি না কাটা মুস্তাহাব৷
হযরত উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إذا رأيتم هلال ذي الحجة وأراد أحدكم أن يضحي فليمسك عن شعره وأظفاره.
"তোমরা যদি যিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখতে পাও আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন স্বীয় চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকে।" (সহীহ মুসলিম: ১৯৭৭; জামে তিরমিযী: ১৫২৩; সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯১; সুনানে নাসায়ী: ৪৩৬২; সহীহ ইবনে হিববান: ৫৮৯৭)
ঈদের দিন ছাড়া পূর্বের নয়দিন রোযা রাখার বিশেষ ফযীলত রয়েছে৷ হয়ত পুরা নয়দিন না হয় যেকোনো দিন রোযা রাখতে পারেন৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই নয়দিন রোযা রাখতেন৷ এক হাদীসে হযরত হাফসা রা. বর্ণনা করেন-
أربع لم يكن يدعهن النبي صلى الله عليه وسلم : صيام عاشوراء والعشر وثلاثة أيام من كل شهر وركعتين قبل الغداة.
"চারটি আমল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ছাড়তেন না। আশুরার রোযা, যিলহজ্বের প্রথম দশকের রোযা, প্রত্যেক মাসের তিন দিনের রোযা, ফজরের আগে দুই রাকাত সুন্নত নামায।" (সুনানে নাসায়ী: ২৪১৫; সহীহ ইবনে হিববান: ৬৪২২; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৭০৪২; মুসনাদে আহমাদ: ২৬৩৩৯)
বিশেষভাবে নয় তারিখের রোযা রাখা৷
যিলহজ্বের প্রথম নয় দিনের মধ্যে নবম তারিখের রোযা সর্বাধিক ফযীলতপূর্ণ। সহীহ হাদীসে এই দিবসের রোযার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي بعده والسنة التي قبله.
"আরাফার দিনের (নয় তারিখের) রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গোনাহ মিটিয়ে দিবেন।" (সহীহ মুসলিম: ১১৬২; সুনানে আবু দাউদ: ২৪২৫; জামে তিরমিযী: ৭৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৩০)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানে:হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৫৯ প্রশ্ন: আমার এক দাদীর মৃত্যুর পর দেখেছিলাম দাদাকে মৃত দাদীর মুখ দেখতে দেয়া হয়নি। কারন জিজ্ঞাসা করার পর আমাকে বলা হয়েছিল কোন নারীর মৃত্যুর পর স্বামীর সাথে তার বিবাহ রদ হয়ে যায়। অথচ পরে আমি কয়েকটি হাদিসে পড়েছিলাম, ইসলামে মৃত্যুর পর স্ত্রীর মৃতদেহ স্বামী কর্তৃক গোসল দেয়ারও প্রমান রয়েছে। যেহেতু কোন আলেমের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করিনি তাই এখনও ব্যাপারটা ঠিক পরিস্কার নয় আমার কাছে।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী কি মৃতের মুখ দেখতে পারবেন? মৃতদেহকে গোসল দিতে পারবেন কি? মৃত্যুর পর বিবাহ কি আসলেই রদ হয়ে যায়?
প্রশ্নটি করেছেন: সামি মিয়াদাদ চৌধুরী
উত্তর: হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী মহিলা হলেন গোপনীয় বস্তু৷ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি, থেকে বর্ণিত,
عن ابن مسعود عن النبى صلى الله عليه وسلم قال: المرءة عورة، فاذا خرجت استشرفها الشيطان. رواه الترمذى.
অর্থাৎ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নারী হল গোপনীয় বস্তু। সে যখন ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তার দিকে দৃষ্টি উঁচু করে তাকাতে থাকে।
(তিরমিযী:১/২২২)
হযরাত হাসান বাছরী রাহ থেকে বর্ণিত,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لعن الله الناظر والمنظور اليه. رواه البيهقى فى شعب الايمان.
অর্থাৎ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান যে, আল্লাহর লা'নত ঐ ব্যক্তির উপর যে গায়রে মাহরাম মহিলার দিকে দৃষ্টি দেবে এবং ঐ বেপর্দা মহিলার প্রতিও আল্লাহর লা'নত যার প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয়।
(শু'আবুল ঈমান, মিশকাত: ২৬৯)
সেই হিসেবে কোনো মহিলাকে জীবিত অবস্থায় যেমন মাহরাম ব্যতীত কেউ দেখা জায়েয নয়, তদ্রূপ মারা যাবার পরও মাহরাম ব্যতিত কোনো পুরুষের জন্যে তাকে দেখা জায়েয নয়। যেমন, পিতা, ছেলে, দাদা, নানা, চাচা, মামা, ভাই তাদের জন্যে দেখা জায়েয। ঠিক তদ্রূপ স্বামীর জন্যেও মৃত স্ত্রীর মুখ দেখা জায়েয আছে। তবে হানাফী মাযহাব মতে মাহরাম পুরুষ থাকাবস্থায় স্বামী স্ত্রীকে গোসল দেয়া ও স্পর্শ করা জায়েয নয়।
অন্যতম ফেক্বাহ গ্রন্থ "দুররুল মুখতারে" রয়েছে:
ويمنع زوجها من غسلها ومسها لا من النظر اليها على الاصح. .. الدر المختار على الرد المحتار:١/٥٧٥ .
অর্থাৎ, সহীহ মতানুসারে স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল দেয়া ও স্পর্শ করা নিষেধ। তার দিকে দৃষ্টি দেয়া নিষেধ নয়।
(আদ্দুররুল মুখতার: ১/৫৭৫)
অনেকে এই ধারণা করে থাকেন বা দাবি করে থাকেন যে, আলী রাযি, তদীয় সহধর্মিণী ফাতিমা রাযি, কে উনার ওফাতের পর গোসল করিয়েছেন।
এ ব্যাপারে আল-মাবসুত্ব লিসসারাখছিতে রয়েছে,
ﻭﺣﺪﻳﺚ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ
ﻏﺴﻠﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﻭﺭﺩ ﺃﻥ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻏﺴﻠﺘﻬﺎ ﺃﻡ ﺃﻳﻤﻦ ﻭﻟﻮ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻏﺴﻠﻬﺎ ﻓﻘﺪ ﺃﻧﻜﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺣﺘﻰ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻋﻠﻲ : ﺃﻣﺎ ﻋﻠﻤﺖ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﺯﻭﺟﺘﻚ ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﻭﺍﻵﺧﺮﺓ ﻓﺎﺩﻋﺎﺅﻩ ﺍﻟﺨﺼﻮﺻﻴﺔ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﻌﺮﻭﻓﺎ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻻ ﻳﻐﺴﻞ ﺯﻭﺟﺘﻪ.
( المبسوط للسرخسى:٢/٧٥)
ভাবার্থ, এই ব্যাপারে আলী (রাঃ) এর ফাতেমা (রা:) কে গোসল দেয়া নিশ্চিত না বরং কোনো কোনো বর্ণণায় পাওয়া যায় তাকে উম্মে আইমান গোসল দিয়েছিলেন। যিনি একজন মহিলা ছিলেন। আর আলী রাযি, পর্দার আড়াল থেকে তার সহযোগী ছিলেন ।
যদি মেনে নেওয়াও যায় যে, আলী রাযি: গোসল দিয়েছিলেন। তাহলে বলা হবে কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় যে ইবনে মাসউদ রা: তাঁর এই কাজের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়ে ছিলেন। এবং তাঁকে বলেছিলেন যে, আপনার কী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী জানা নেই? যে ফাতেমা দুনিয়ায়ও তোমার স্ত্রী এবং আখেরাতেও। সুতরাং তার বৈশিষ্টের দাবী করা এ কথারই প্রমাণ বহন করে যে, সাহাবাদের মাঝে স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল দেয়ার প্রচলন ছিল না। বোঝা গেল এটা সর্বজন স্বীকৃত ছিল না, বরং আলীর একাকী আমল ছিল। যার দ্বারা ব্যাপক ভাবে কোনো বিধান সাব্যস্থ হতে পারে না।
(আল-মাবসুত্ব:২/৭৫,বাজলুল মাজহুদ, জানাযা অধ্যায়,)
উল্লেখ্য: প্রশ্নকারী উপোরোক্ত প্রেক্ষাপটে একটি হাদিসের অবতারণা করে বিষয়টি সম্পর্কে আরো গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হন। উনার উল্লেখিত হাদিসটি ছিল-
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﻗَﺎﻟَﺖْ ﺭَﺟَﻊَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺒَﻘِﻴْﻊِ ﻓَﻮَﺟَﺪَﻧِﻰْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺟِﺪُ ﺻُﺪَﺍﻋًﺎ ﻓِﻰْ ﺭَﺃْﺳِﻰْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﻗُﻮْﻝُ ﻭَﺍﺭَﺃْﺳَﺎﻩُ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺑَﻞْ ﺃَﻧَﺎ ﻳَﺎ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔُ ﻭَﺍﺭَﺃْﺳَﺎﻩُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺿَﺮَّﻙِ ﻟَﻮْ ﻣِﺖِّ ﻗَﺒْﻠِﻰْ ﻓَﻘُﻤْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻓَﻐَﺴَّﻠْﺘُﻚِ ﻭَﻛَﻔَّﻨْﺘُﻚِ ﻭَﺻَﻠَّﻴْﺖُ ﻋَﻠَﻴْﻚِ ﻭَﺩَﻓَﻨْﺘُﻚِ .
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাক্বীউল গারক্বাদ থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, হ্যায় আমার মাথা ব্যথা! তখন রাসূল সা, বলেছিলেন, আয়েশা! বরং আমার মাথায় ব্যথা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার ছালাত আদায় করব।
(ইবনু মাজাহ: ১৪৬৫, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ- ৯; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০০, পৃ:৩/১৬০)
উল্লেখিত হাদিসের ব্যাখায় মালিকুল ফুকাহা আল্লামা কাসানী রাহ বলেন,
ﻭﺣﺪﻳﺚ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻐﺴﻞ ﺗﺴﺒﺒﺎ ﻓﻤﻌﻨﻰ ﻗﻮﻟﻪ ﻏﺴﻠﺘﻚ) ﻗﻤﺖ ﺑﺄﺳﺒﺎﺏ ﻏﺴﻠﻚ ، ﻛﻤﺎ ﻳﻘﺎﻝ ﺑﻨﻰ ﺍﻷﻣﻴﺮ ﺩﺍﺭﺍ ﺣﻤﻠﻨﺎﻩ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺻﻴﺎﻧﺔ ﻟﻤﻨﺼﺐ ﺍﻟﻨﺒﻮﺓ ﻋﻤﺎ ﻳﻮﺭﺙ ﺷﺒﻬﺔ ﻧﻔﺮﺓ ﺍﻟﻄﺒﺎﻉ ﻋﻨﻪ ، ﻭﺗﻮﻓﻴﻘﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺪﻻﺋﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﻪ ﻳﺤﺘﻤﻞ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻣﺨﺼﻮﺻﺎ ﺑﺄﻧﻪ ﻻ ﻳﻨﻘﻄﻊ ﻧﻜﺎﺣﻪ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻟﻘﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ (ﻛﻞ ﺳﺒﺐ ﻭﻧﺴﺐ ﻳﻨﻘﻄﻊ ﺑﺎﻟﻤﻮﺕ ﺇﻻ ﺳﺒﺒﻲ ﻭﻧﺴﺒﻲ).
بدائع الصنائع: ١/٣٠٦.
অর্থাৎ, আয়েশা রাযি, এর হাদিসটি গোসলের সরঞ্জামাদি ও উপকরণাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা আয়েশাকে লক্ষ্য করে (আমি তুমাকে গোসল দেব) এর অর্থ হল, আমি তোমার গোসলের সরঞ্জামাদি নিয়া দাঁড়াব। এই অর্থ নবুওয়্যাতের পদকে স্বভাবগত ঘৃণা তৈরী হওয়ার সংশয় থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যে এবং প্রমাণাদির মধ্যে সামঞ্জস্যতা তৈরীর লক্ষ্যে নিলাম। তাছাড়া এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট হতে পারে। কেননা রাসুলের মৃত্যুর পর উম্মুল মুমিনদের সাথে তাঁর বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক কারণগত ও বংশগত সম্পর্ক মৃত্যুর দ্বারাই নি:শেষ হয়ে যায় কেবল আমার সাথে যাদের কারণগত ও বংশগত সম্পর্ক মৃত্যুর দ্বারা শেষ হয় না।
(বাদায়িউস সানায়ি: ১/৩০৬-৩০৭)
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ! ﺟﺰﺍﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮﺍ!
উত্তর প্রদানে: মুফতি দানিয়াল মাহমুদ (দাঃ বাঃ)
60 প্রশ্ন: জামাতে নামাজ পড়ার সময় ইমাম সাহাবের আগে যদি কেউ রুকু সিজদাহ করে তাহলে কি নামাজ হবে?অনেকে দেখা যায় আল্লাহু আকবার বলার আগেই নেমে যান।
প্রশ্নটি করেছেন: মেহরাজ হুসাইন কাওসার
উত্তর: ইমাম সাহেবের আগে রুকু-সিজদায় চলে গেলেও ইমাম সাহেবও যদি ওই রুকুতে পৌঁছে যান, তাহলে নামায হয়ে যাবে৷ যদিও এমন করা ঠিক হবে না৷ নামায মাকরূহ হবে৷ আর যদি কিছু সময়ের জন্যেও ইমাম সাহেবের সাথে মিলিত না হয় অর্থাৎ ইমাম সাহেব রুকুতে যেতে যেতে কিংবা সিজদায় যেতে যেতে মুক্তাদী মাথা উঠিয়ে নেয়, তখন মুক্তাদির নামায ফাসিদ হয়ে যাবে৷ হাদীসে এসেছে:
إنما جعل الإمام ليؤتم به. فإذا كبر فكبروا ولا تكبروا حتى يكبر، وإذا ركع فاركعوا ولا تركعوا حتى يركع، وإذا سجد فاسجدوا ولا تسجدوا حتى يسجد.
( أخرجه الإمام أحمد في مسنده: 2/341، وأبو داود في سننه 603)
“ইমাম বানানো হয় অনুসরনের জন্য। তাই তিনি যখন তাকবীর বলেন তোমরাও তাকবীর বলো৷ তোমরা তাকবীর বলবে না, যতক্ষণ না তিনি তাকবীর বলেছেন৷ তিনি যখন রুকুতে যান, তোমরাও রুকুতে যাও৷ তোমরা রুকুতে যেও না, যতক্ষণ না তিনি রুকুতে গিয়েছেন৷ তিনি যখন সিজদা করেন, তোমরাও সিজদা করো৷ তোমরা সিজদা করো না, যতক্ষণ না তিনি সিজদা করবেন৷" (মুসনাদে আহমদ: ২/৩৪১, আবু দাউদ: ৬০৩)
لو ركع قبل الإمام فلحقه إمامه فيه صح ركوعه وكره تحريما وإلا لا يجزيه.
(الدرالمختار: ٢/٦١)
"ইমাম সাহেবের পূর্বে যদি রুকুতে চলে যায়, এরপর ইমাম সাহেবও রুকুতে গিয়ে মিলিত হয়ে যান, তখন মুক্তাদির রুকু সহীহ হয়ে যাবে৷ যদিও মাকরূহে তাহরীমী হবে৷ অন্যথায় রুকু সহীহ হবে না" (বিধায় নামাযও হবে না)৷ (আদ্দুররুল মুখতার: ২/৬১)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৬১ প্রশ্ন: কোন সন্তান যদি জন্মের আগে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার আকিকা কি করতে হবে? কেউ যদি জন্মের ১০ দিন পরে মৃত্যু হয় তার কি আকিকা করতে হবে?
প্রশ্নটি করেছেন: মাসকুর দেওয়ান।
উত্তর: সন্তান জন্ম হলে আকীকা করা মুস্তাহাব৷ এটা জন্মের সাথে সম্পর্কিত৷ তাই সন্তান জন্মের সাতদিনের মাথায় আকীকা করার কথা হাদীসে এসেছে৷ রাসূল সা, ইরশাদ করেন:
كُلُّ غُلَامٍ رَهِينَةٌ بِعَقِيقَتِهِ تُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ سَابِعِهِ وَيُحْلَقُ وَيُسَمَّى.
(رواه أبو داود: ٢٤٥٥ والترمذي: ١/٢٧٨)
"প্রতিটি বাচ্ছা আকীকার মাধ্যমে দায়বদ্ধ হয়ে যায়৷ সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবাই করা হয় তার মাথা মুন্ডানো হয় ও তার নাম রাখা হয়।" (আবুদাউদ: ২৪৫৫, তিরমিযী: ১/২৭৮)
সপ্তম দিন সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিন করবে, তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিন আকীকার কথাও হাদীস ও ফিকহের কিতাবে এসেছে৷ ইমাম তিরমিযী উপরের হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন:
والعمل على هذا عند أهل العلم يستحبون أن يذبح عن الغلام العقيقة يوم السابع فإن لم يتهيأ يوم السابع فيوم الرابع عشر فإن لم يتهيأ عق عنه يوم إحدى وعشرين.
(جامع الترمذي: ١/٢٧٨)
"আহলে ইলমের (ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণের) কাছে এর উপরই আমল যে, তারা সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকীকার পশু জবাই মুস্তাহাব মনে করেন৷ আর যদি সপ্তম দিন ব্যবস্থা না হয়, তাহলে চৌদ্দতম দিন৷ এরপরও যদি ব্যবস্থা না হয়, তাহলে একুশতম দিন সন্তানের আকীকা করবে৷" (তিরমিযী: ১/২৭৮)
তবে বাচ্চা যদি ভূমিষ্ঠের আগেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার আকীকা করা মুস্তাহাব নয়। (ফাতাওয়া দারুল উলুম ১৫/৬২৪)
ঠিক তদ্রূপ ভূমিষ্ঠের পর আকীকার পূর্বে বাচ্চা যদি মৃত্যুবরণ করে, তখন আর তার আকীকা নেই৷ (আহসানুল ফাতাওয়া: ৭/৫৩৬)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৬২ প্রশ্ন: হালাল জন্তুর গোশত কাঁচা খাওয়া কি জায়েজ?
প্রশ্নটি করেছেন: আবু আব্দুল্লাহ
উত্তরঃ হালাল, পবিত্র ও জবাইকৃত গোশত কাঁচা খাওয়াও জায়েয আছে৷ যদিও স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে৷
وقال الجصاص: والدليل أيضا على أن المحرم منه هو المسفوح اتفاق المسلمين على إباحة الكبد والطحال وهما دمان وقال النبي صلى الله عليه وسلم أحلت لي ميتتان ودمان يعنى بالدمين الكبد والطحال فأباحهما وهما دمان إذ ليسا بمسفوح فدل على إباحة كل ما ليس بمسفوح من الدماء اهـ: 3/ 296
"ইমাম জাসসাস রাহ, বলেন: ওই রক্ত হারাম, যেগুলো প্রবাহমান হয়৷ মুসলমানদের সর্বসম্মত মত হচ্ছে, কলিজা এবং প্লীহা উভয়টি রক্তের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও খাওয়া জায়েয৷ কেননা রাসূল সা, বলেছেন: আমার জন্যে দুই প্রকার মৃত ও দুই প্রকার রক্ত হালাল করা হয়েছে৷ (দুই প্রকার রক্ত) অর্থাৎ কলিজা এবং প্লীহা হালাল করা হয়েছে৷ কেননা এগুলো প্রবাহমান রক্ত নয়৷ তাহলে বুঝা গেলো, প্রত্যেক ওই রক্ত, যেগুলো প্রবাহমান নয়; খাওয়া জায়েয৷" (আহকামুল কুরআন: ৩/২৯৬)
যেহেতু হালাল জন্তু জবাই করে নিলে পাক হয়ে যায়৷ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
إلا ما ذكيتم. سورة المائدة: ٣
"কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ (তা তোমাদের জন্যে হালাল)৷" (সূরা আল-মায়িদাহ: ৩)
এবং গোশতের সাথে মিলিত রক্ত যেহেতু প্রবাহমান নয়, তাই জবাইকৃত কাঁচা গোশত খাওয়া জায়েয আছে৷
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানে: মুফতি জিয়া রাহমান।
(জায়েয-নাজায়েয অধ্যায়)
৬৯। প্রশ্ন: নামাযের মাঝখানে অনেক সময় রাকাতের হিসাব ভুলে গেলে করণীয় কি? ৪ রাকাতের সালাতের সময় অনেক সময় কনফিউশন চলে আসে যে এটা ৩ না ৪ নম্বর রাকাত। সে ক্ষেত্রে কি করতে হবে?
প্রশ্নটি করেছেন: তাওহীদ আব্দুল্লাহ।
উত্তর: যদি চিন্তাভাবনা করে তিন রাকআত পড়েছেন নাকি চার রাকআত পড়েছেন? কোনো একদিকে মন সায় না দেয়, তাহলে রাকঅাতের কম সংখ্যা ধরে নামায শেষ করবেন৷ অর্থাৎ চার আর তিনে কনফিউশন হলে তিন রাকআত ধরে নামায সমাপ্ত করবেন৷ হাদীসে এসেছে:
عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا شك أحدكم في صلاته فلم يدر كم صلى ثلاثا أم أربعا فليطرح الشك وليبن على ما استيقن ثم يسجد سجدتين.
(رواه مسلم: ٥٧١)
"হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা, থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নামাযে সন্দেহে পড়ে যায়, কয় রাকআত পড়েছে? তিন রাকআত না চার রাকআত? তখন সে যেন সন্দেহ ছুড়ে ফেলে নিশ্চিতের উপর নামাযের ভিত্তি রাখে (অর্থাৎ বেশি এবং কমের মধ্যে কমকে যেন প্রাধান্য দেয়) অতঃপর সাজদায়ে সাহু করে৷" (মুসলিম: ৫৭১)
وان لم يترجح عنده شىء بعد الطلب فإنه يبنى على الأقل.
(الفتاوى الهندية: ١/١٣٠)
"চিন্তা-ফিকিরের পর কোনো একদিকে মন অগ্রসর না হলে কম সংখ্যার উপর নামাযের ভিত্তি রাখবে৷" (হিন্দিয়া: ১/১৩০)
প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে নতুন প্রশ্ন: এক্ষেত্রে সাহু-সিজদাহ দিতে হবে কি?
প্রশ্নটি করেছেন: নাঈম আজাদ
উত্তর: চিন্তা-ফিকির করতে করতে যদি তিনবার 'সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম' বলার সমপরিমাণ বা তারচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হয়, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে৷ অন্যথায় ওয়াজিব হবে না৷ (তাতার খানিয়া: ১/৭২৫)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৬৩ প্রশ্ন: এটা কি গ্রহনযোগ্য হাদিস " তোমার ঈমান কে খাটি কর অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে"
দলিলটা দিলে উপকৃত হতাম।
প্রশ্নটি করেছেন: মোহাম্মদ পিয়াল হাসান পারভেজ।
উত্তর: হযরত মুআয রা, থেকে বর্ণিত হাদীসটির মূল এবারত এই-
عن مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، أَنَّهُ قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَوْصِنِي. قَالَ: أَخْلِصْ دِينَكَ يَكْفِكَ الْقَلِيلُ مِنَ الْعَمَلِ.
(رواه الحاكم: ٤/٣٤١، والبيهقى: ٩/١٧٤، ١٧٥)
মুসতাদরাকে হাকিমে ইমাম হাকিম রাহ, হাদীসটি এনেছেন এবং হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন৷ (হাকিম: ৪/৩৪১, বাইহাকী: ৯/১৭৪-১৭৫)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৬৪ প্রশ্ন: আমি হানাফি মাযহাব অনুসরণ করার চেষ্টা করছি, আলহামদুলিল্লাহ্। যতটুকু খোঁজ নিয়েছি এদেশের হানাফি মাযহাব অনুসারী 'আলিমরা মূলত মাতুরিদি,আশআরি আকিদায় বিশ্বাসী। আমার কাছে আকিদার ক্ষেত্রে আসারি (أثري) দের বিশ্বাসকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে এবং তুলনামূলক সত্যের অধিক নিকটবর্তী মনে হয়েছে, যেমনটা অধিকাংশ হাম্বালি মাযহাবের অনুসারীরা মনে করে। শ্রদ্ধেয় জিয়াউর রহমান ভাই যদি দয়া করে আমাকে জানাতেন, আমি যদি আসারি (أثري) মতের অনুসারী হই, এতে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা? আপনার গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শের অপেক্ষায় রইলাম।
প্রশ্নটি করেছেন: ইশতিয়াক আহমেদ সাঈফ
প্রশ্নটি করেছেন: ইশতিয়াক আহমেদ সাঈফ
উত্তর: ওয়ালাইকুমস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ৷ আপনার প্রশ্ন দেখে মনে হয়েছে, মাযহাব ও আকিদা বিষয়ে আপনি অনেক জ্ঞান রাখেন। আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ তায়ালা যেন আপনাকে আমাকে আরো দ্বীনি জ্ঞান দান করেন। আমিন। শ্রদ্ধেয় ভাই, মূলত আসারি, মাতুরিদি এবং আশআরি আকিদায় যারা বিশ্বাসী তারা সকলেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের লোক। হাম্বলি মাযহাবের প্রসিদ্ধ আলেম ইমাম আবুল আওন মুহাম্মাদ বিন আহমদ সাফারিনি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
(أهل السنة والجماعة ثلاث فرق:ـ الأثرية وإمامهم أحمد بن حنبل رضي الله عنه. ـ والأشعرية وإمامهم أبوالحسن الأشعري. ـ والماتردية وإمامهم أبو منصور الماتريدي رحمهما الله تعالى) اهـ.
তিনটি দল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত।
১) আসারিয়্যাহ, তাদের ইমাম হলে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাযিআল্লাহু আনহু।
২) আশয়ারিয়্যাহ, তাদের ইমাম হলেন, আবুল হাসান আল আশআরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৩) মাতুরুদিয়্যাহ, তাদের ইমাম হলেন, আবু মানুসুর মাতুরুদি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। (লাওয়ামিউ আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্টা ৭৩)
২) আশয়ারিয়্যাহ, তাদের ইমাম হলেন, আবুল হাসান আল আশআরি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৩) মাতুরুদিয়্যাহ, তাদের ইমাম হলেন, আবু মানুসুর মাতুরুদি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। (লাওয়ামিউ আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্টা ৭৩)
তিনি আরো কিছু আলেমের বক্তব্য উল্লেখ করেন,
هم - يعني الفرقة الناجية - أهل الحديث يعني الأثرية والأشعرية والماتريدية ) اهـ.
তারা অর্থাৎ মুক্তিপ্রাপ্ত দল হল আহলে হাদিস, তথা আসারিয়্যাহ, আশয়ারিয়্যাহ এবং মাতুরুদিয়্যাহ। (লাওয়ামিউ আনওয়ারিল বাহিয়্যাহ খণ্ড ১, পৃষ্টা ৭৬)
হাম্বলি মাযহাবের আরো একজন বিশিষ্ট আলিম ইমাম আব্দুল বাকি আল মাওয়াহেবি বলেন,
طوائف أهل السنة ثلاثة : أشاعرة وحنابلة وماتريدية
আহলুস সুন্নাতের তিনটি দল রয়েছে। আশয়ারিয়্যাহ, হাম্বলি (আসারিয়্যাহ) এবং মাতুরুদিয়্যাহ। (আল আইন ওয়াল আসর পৃষ্ঠা ৫২) ইমাম সুবাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (শরহু আকিদাতি ইবনে হাজিবে) বলেন, আহলুস সুন্নাতের সকলেই একই আকিদায় বিশ্বসী। অতপর তিনি উপরোক্ত তিন দলকে আহলে সুন্নাতের মধ্যে গণ্য করেন।
উস্তাদ আহমদ এসাম বলেন,
"وبالجملة فهم: أهل الحديث، والأشاعرة، والماتريدية؛ لأنهم جميعاً التزموا أسس العقيدة وأصولها
মোটকথা, (আহলুস সুন্নাহ) তারা হলেন, আহলুল হাদিস (আসারিয়্যাহ),আশয়ারিয়্যাহ এবং মাতুরুদিয়্যাহ। (আকিদাতুত তাওহীদ ফি ফাতহিল বারি ৮৬)
প্রিয় ভাই, এখানে নামে তিনটি দল হলেও মূলত ইসলামী আকীদার ক্ষেত্রে সকলেই সাহাবী-তাবিয়ী ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা অনুসরণ ও প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট ছিলেন এবং আছেন। (ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও প্রায় এমনটাই “আল-ফিকহুল আকবর” এ বলেছেন) তবে খুঁটিনাটি কিছু বিষয়ে পরষ্পরের মধ্যে মতভেদ আছে। আর এই মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে তৎকালিন অবস্থা এবং প্রেক্ষাপটের কারণে।
যেহেতু তিনটিই হক, তাহলে যে কোন একটি মেনে নিলে কোন সমস্যা নেই। তবে কোন একটি এলাকায় একটি মতবাদ বা মাযহাবের প্রচলন না থাকলে, সেখানে অপরিচিত কোন একটি মতবাদ নিয়ে আসলে ফিতনার আশংকা থাকে কয়েক কারণে- একটি হচ্ছে, যেমন কেউ আল্লাহ তায়ালার গুণাবলির মধ্য থেকে একটি গুণের আলোচনা করতে গিয়ে এমন একটি শব্দ প্রয়োগ করল, যা বাস্তবে সঠিক। কিন্তু তা শুনে আমাদের দেশের অনেক আছে, যে ওই ব্যক্তিকে ভ্রষ্ট মনে করবে, ভুল মনে করবে। কোন কোন ক্ষেত্রে বর্তমানে এই সমস্যাটি কিছুটা আমরা দেখতেও পাচ্ছি।
আরো একটি হলো, যে দেশে যে মতবাদ বা মাযহাব প্রচলিত আছে, সেখানে ঔ মাযহাব বা মতবাদের উপর থাকা শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র ফতওয়া মতে ফরয। কেননা হঠাৎ কোন মাসআলায় আটকে গেলে অন্য মাযহাবের কোন আলেম বা কিতাব তার সামনে থাকবে না, সে সমস্যায় পড়বে।(রেফারেন্সটা এখন স্মরণ নেই) যেমনটি আমাদের দেশে আসারি মতবাদের বেলায় প্রযোজ্য। কেননা এই মতবাদের নামটি পর্যন্ত অনেকে জানেন না। তা ছাড়া হাম্বলি মাযহাবের একটি শাখাদল এমন ছিল, যারা তখনকার সময় অতি বাড়াবাড়ি করত। যেমন, ইমাম আহমদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রথমত বলতেন, যে কোরঅনকে মাখলুক বলবে সে জাহমিয়্যাদের অন্তর্ভুক্ত। আর যে বলবে তা গায়র মাখলুক, সে বেদআতি। অত:পর অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিনি নিজেই বলতেন, কোরআন আল্লাহর কালাম, তা সৃষ্ট নয়। (তাঁর এই সঠিক আকিদার জন্য অনেক কষ্ট ও নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। জাযাল্লাহু আন্না ওয়া আন সায়িরিল মুসলিমিন, আমীন!) অতপর কিছু হাম্বলি এই আকিদা ধারণ করতে লাগল যে, কোরআন শরিফের গিলাফটাও মাখলুক নয়। (ইবনুল হাম্বল ওয়া খালকুল কোরআন) এভাবে আরো অনেক মাসআলায় তাদের অনেকে বাড়াবাড়ি করেছেন। যে কারণে এই মতবাদের সঠিক মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রেও খুব বেশি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আরো একটি সমস্যা হচ্ছে, আকিদা বিষয়টি একটি স্পর্শঘাতক এবং এর মর্ম বুঝতে হলে খুবই সুক্ষ্ম জ্ঞানের অধিকারি হতে হয়। শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে এরূপ একটি বক্তব্য উল্লেখ আছে যে, তিনি আল ফাউযুল কাবিরে বলেন,
تجلى لك أن خطوات الإنسان على درب علمه الفطري غير المكتسب، وتمييزه للصفات التي يجوز أن تنسب إلى الله - تعالى - ولا يقع فيها خلل، عن الصفات التي يؤدي استعمالها إلى الأوهام الباطلة والعقائد المنحرفة، أمر دقيق خطير للغاية لا يصل غوره ولا يكتنه كنهه جمهور الناس، ولذلك قرر أن يكون علم الصفات الإلهية توفيقاً، ولا يسمح بالبحث والكلام بحرية وإطلاق.
আরো কিছু সমস্যা আছে, আপনার সাথে যেগুলোর বিশদ আলোচনা করা নিষ্প্রয়োজন মনে করি। কেননা আমার ধারণা মতে আপনি এবিষয়ে অনেক ভালো জানেন। আবারো শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ। তাই শায়খ হাফিজ মাওলানা মুফতি জিয়াউর রহমান হাফিযাহুল্লাহ’র হুকুম তামিল করার জন্য অদম এ পরামর্শ দিচ্ছে যে, আমাদের দেশের প্রায় সকল আলেমগণ যে দিকে আছেন, সেদিকে চলাই আপনার জন্য, উম্মাতের জন্য ফায়দা হবে ইনশাআল্লাহ।
আকিদা বিষয়ে “আল আকিদাতুত তাহাবিয়্যাহ” নামে খুবই মূ্ল্যবান একটি কিতাব আছে। ইমাম তাহাবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’র লিখিত কিতাবটি কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে সৌদি সরকার বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে কিতাবটি ছাপিয়েছে। অধমের কাছে বাংলা, উরদূ এবং সৌদি সরকার কর্তৃক ছাপানো ইংলিশ এক কপিসহ এই কিতাবের কয়েক কপি আছে। চতুর্থ হিজরী শতকের প্রথমার্ধে লিখিত এই কিতাবটির তখন থেকে নিয়ে এপর্যন্ত অনেক টীকা, ব্যাখ্যা লেখা হয়েছে। সর্বশেষ শায়খ বিন বায, শায়খ উসাইমিন এবং শায়খ আলবানিও এই কিতাবটির টীকা লিখেছেন। আকিদার ক্ষেত্রে এই কিতাবটিকে গুরুত্ব দিলে ইনশাআল্লাহ অনেক ফায়দা হবে। তাছাড়া বাংলা ভাষায় মুফতি আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ’র 'ঈমান সবার আগে' ও মুফতি মনসুরুল হক হাফিযাহুল্লাহ’র 'কিতাবুল ঈমান' বই দুটিও আপনার চাহিদার যোগান কিছুটা হলেও দিবে৷ জাযাকাল্লাহু খাইরান!
৬৫ প্রশ্ন: ঔষধ কোম্পানীগুলো তাদের প্রোডাক্ট লেখানোর জন্য যে স্যাম্পল বা গিফ্ট ডাক্তারদের দিয়ে থাকে, তা দেয়া এবং নেয়া বৈধ কিনা?
প্রশ্নটি করেছেন: আসাদুজ্জামান রুবেল
প্রশ্নটি করেছেন: আসাদুজ্জামান রুবেল
উত্তর: বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানী বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে ডাক্তারকে যেসব উপহার দেওয়া হয় তা যদি নগদ অর্থ বা চেক হয় কিংবা বিদেশে যাওয়ার প্যাকেজ অথবা মূল্যবান কোনো ব্যবহার সামগ্রী ইত্যাদি হয় তাহলে তাও ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো গ্রহণ করা ডাক্তারের জন্য জায়েয নয়। অবশ্য ওষুধের সেম্পল কিংবা ওষুধের বিজ্ঞাপন সম্বলিত চিকিৎসার ব্যবহার সামগ্রী, যেমন কলম, খাতা, প্যাড, পেপারওয়েট ইত্যাদি নেওয়া ডাক্তারের জন্য জায়েয আছে। তবে ডাক্তারের জন্য এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, ডাক্তারদেরকে কমিশন দেওয়ার এ প্রথাটি আগে ছিল না। এটি চালু করেছে কিছু অসাধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। তারা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অনৈতিক পথে আগায় এবং ডাক্তারদেরকে তাদের কাছে রোগী পাঠানোর জন্য কমিশন দেওয়ার প্রলোভন দেয়। প্রথমে এর পরিমাণ কম ছিল। পরে কমিশনের হার আকাশচুম্বী করা হয়। আর এ টাকার ভার রোগীদেরকেই বহন করতে হয়। এই অনৈতিক কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে ওইসব অসাধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষই দায়ী। এই অবৈধ পন্থা চালু হওয়ার কারণে কোনো রকম গুণগত মান ছাড়াই রাতারাতি গজিয়ে উঠে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যাদের মূল কামাইয়ের অধিকাংশ বা তারও বেশি ডাক্তারদেরকে কমিশন হিসেবে দিয়ে দিতে হয়।
বর্তমানে এর সমাধানও খুব কঠিন নয়। মানসম্মত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যদি ডাক্তারদেরকে কমিশন না দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেয়, সাথে টেস্টের ফিও স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং টেস্টের মানও উন্নত করে এবং রোগীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাহলে সহজেই ঐ কমিশন পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাবে। এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও ব্যবসায়িক খাতিরেই নিজেদের মান উন্নত করতে বাধ্য হবে এবং টেস্ট ফিও কমাবে।
মাআলিমুস সুনান ৪/১৬১; আলমাবসূত সারাখসী ১৬/৮২
(মাসিক আল-কাউসার: নভেম্বর ২০১৫)
(মাসিক আল-কাউসার: নভেম্বর ২০১৫)
উত্তর প্রদান করেছেন: মুফতি জিয়া রহমান (হাফিযাহুল্লাহ)
No comments:
Post a Comment