দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান - لا إله إلا الله محمد رسول الله

আপডেট তথ্য

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Monday, February 12, 2018

দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান

48 প্রশ্ন: কোনো মহিলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো অনুষ্ঠানের শুরুতে যদি কোনো মহিলা পবিত্র কোরান থেকে তেলাওয়াত করেন ,
আর উক্ত অনুষ্ঠানে পুরুষ শ্রোতা উপস্তিত থাকেন, এমতাবস্থায় কোনো মহিলা দ্বারা তেলাওয়াত করা কতটুকু জায়েয ?
উত্তর: বিনা প্রয়োজনে মহিলাদের তেলাওয়াতের আওয়াজ পরপুরুষদের শুনানো মাকরূহ৷ একারণে মহিলাদের আযান দেয়া নিষেধ৷ এসমস্ত কথা থেকে বুঝা যায় প্রয়োজন ছাড়া মহিলাদের মধুর কণ্ঠে পরপুরুষের সামনে তাদের আওয়াজ প্রকাশ করা জায়েয নয়৷ তাই প্রশ্নে বর্ণিত ক্ষেত্রে মেয়েদের এভাবে উন্মুক্তভাবে সবার সামনে তেলাওয়াত করা জায়েয হবে না৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন-
ولايضربن بأرجلهن ليعلم ما يخفين من زينتهن.
(سورة النور: ٣١)
"তারা যেন নিজেদের গোপন আভরণ প্রকাশের লক্ষে সজোরে পদক্ষেপ না ফেলে৷" (সুরা আন-নূর: ৩১)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু বকর জাসসাস রাহ, বলেন:
قال الجصاص في تفسيره: وفي الآية دلالة على أن المرأة منهية عن رفع صوتها بالكلام بحيث يسمع ذلك الأجانب إذا كان صوتها أقرب إلى الفتنة من صوت خلخالها.
(احكام القرآن للجساس: ٣/٣٩٣)
"এই আয়াত এটা প্রমাণ করে যে, যেখানে পরপুরুষ আওয়াজ শুনার ক্ষেত্র থাকে, সেখানে নারীর জন্যে উচ্চ আওয়াজে কথা বলা নিষেধ৷ কেননা যেখানে নারীর পায়ের ঘুঙুরের আওয়াজ ফিতনার কাছাকাছি (সেখানে মুখের আওয়াজ তো আরো বেশি ফিতনার কারণ হবে৷)" (আহকামুল কুরআন: ৩/৩৯৩)
তাছাড়া বুখারী, মুসলিমসহ সুনানের হাদীসের কিতাবগুলোতে এসেছে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন মেয়েদের দ্বীন শেখার নিমিত্তে মসজিদে আসার স্বাভাবিক অনুমতি ছিল, তখন নামাযের ভিতর কোনো সমস্যা দেখা দিলে রাসূল সা, বলে দিয়েছেন যে:
التسبيح للرجال والتصفيق للنساء.
(رواه البخاري: ٦٨٤ ومسلم: ٤٢١)
অর্থাৎ "পুরুষরা সুবহানাল্লাহ বলবে এবং মহিলারা এক হাত অপর হাতে তালি মেরে আওয়াজ করবে৷" (বুখারী: ৬৮৪, মুসলিম: ৪২১)
তাছাড়া কারো কারো মতে তো নারীদের আওয়াজটাই পর্দার অন্তর্ভুক্ত৷
وتقدم فى شروط الصلاة ان صوت المرأة عورة على الراجح.
(ردالمحتار: ٥/٢٣٦ بحواله احسن الفتاوى)
"পূর্বে নামাযের শর্তাবলীর বিবরণে আলোচিত হয়েছে যে, অগ্রগণ্য মতানুসারে নারীদের আওয়াজও পর্দার অন্তর্ভুক্ত৷" (রদ্দুল মুহতার: ৫/২৩৬)
وفى الكافى ولا تلبى جهرا لأن صوتها عورة.
(ردالمحتار: ١/٢٧٢)
"কাফী নামক কিতাবে বলা হয়েছে, হজ্বে নারীরা শব্দ করে তালবিয়া পাঠ করবে না৷ কেননা নারীদের আওয়াজ পর্দার অন্তর্ভুক্ত৷" (রদ্দুল মুহতার: ১/২৭২)
এই সমস্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেলো পরপুরুষের সামনে মহিলাদের মধুর কণ্ঠে আওয়াজ প্রকাশ করা নিষেধ৷
ইসলামের সোনালী যুগেই রাসূল সা, মহিলাদের আওয়াজ সম্পর্কে কতই না সতর্কতা অবলম্বন করেছিলেন, তাহলে এই ফিতনার যুগে কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, একটু আন্দাজ করা দরকার৷
والله تعالى أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৪৯ প্রশ্ন: কিয়ামুল লাইলে সময় কোরআন সামনে রেখে সালাত আদায় করা যায় কি?
উত্তর: ইমাম আবু হানীফা রাহ, তথা হানাফী মাযহাবের ফাতাওয়া হচ্ছে, যে কোনো নামাযে কুরআন দেখে পড়লে ও দেখে শুনলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে৷ এই হুকুম মূলত দুই কারণে:
এক. নামাযে যখন কুরআন দেখে তিলাওয়াত করা হবে, তখন কুরআন এক হাত দ্বারা ধরতে হবে, পৃষ্ঠা উল্টাতে হবে, কুরআনের দিকে তাকাতে হবে৷ এ সবকিছুই অপ্রয়োজনীয়৷ এসবের প্রয়োজন নেই৷ এটাই আমলে কাসীর তথা নামাযে অতিরিক্ত আমল, যা নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ৷
দুই. নামাযের ভেতর কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে কুরআন শিখলে যেভাবে নামায ফাসিদ হয়ে যায়, ঠিক তদ্রূপ নামাযে কুরআন দেখে তিলাওয়াত করা কুরআন থেকে শেখারই নামান্তর, যা নামায ফাসিদ হওয়ার কারণ৷
(হিদায়া: ১/৬২, বাদায়েউস সানায়ে': ১/৫৪৩)
قد روى أبو بكر بن أبي داود في كتاب المصاحف بإسناده عن ابن عباس قال : نهانا أمير المؤمنين أن نؤم الناس في المصاحف.
(المغنى: ١/٦٤٨)
হযরত ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমীরুল মু'মিনীন আমাদেরকে নিষেধ করেছেন; কুরআনের কপি থেকে (দেখে) ইমামতি করতে৷ (আল-মুগনী: ১/৬৪৮)
فى الفتاوى الهندية: ويفسدها قراءته من المصحف عند أبى حنيفة رحمه الله.
ইমাম আবু হানীফা রাহ, এর মতে নামাযে কুরআনের মাসহাফ দেখে তিলাওয়াত করলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে৷ (হিন্দিয়া: ১/১০১)
তবে ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ রাহিমাহুমাল্লাহর মতে নামাযে কুরআন থেকে দেখে তিলাওয়াত করা জায়েয৷ ইমাম মালিক রাহ, এর এক মতও নামায সহীহ হওয়ার পক্ষে, তবে ফরয নামাযে মাকরূহ বলেন৷ (বাদায়েউস সানায়ে': ১/৫৪৩, আল-মাজমূ' নাওয়াওয়ী: ৪/২৭)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫০ প্রশ্ন: ইশার পর নামায পরতে গিয়ে ভুলে গেসি সুন্নাত পড়ছি নাকি বিতির পড়ছি। পরে সন্দেহ হল বিতির পড়ছি। তাই বিতির হিসেবেই সাহু সেজদা দিয়ে নামায শেষ করেছি। আমার নামায কি হয়েছে না দোহরাতে হবে?
উত্তর: আপনি যদি নির্দিষ্ট করে বিতরের নামাযের নিয়ত করে থাকেন, তাহলে তো বিতরই আদায় হয়েছে৷ আর যদি কোন্ নামাযের নিয়ত করেছেন, তা-ও জানেন না বা ভুলে যান, তাহলে সুন্নাত মনে করে নামায শেষ করবেন৷ আর এই সন্দেহে পড়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে যদি তিন তাসবীহের বেশি পরিমাণ সময় চলে যায়, তাহলে সাহু সিজদা করতে হবে৷ যেহেতু বিতর নামায ওয়াজিব হওয়ার কারণে নামাযের শুরু থেকেই নিয়ত থাকা দরকার ছিলো, তাই শুরুতে নিয়ত না পাওয়ার কারণে এই নামাযকে সুন্নাত হিসেবে পড়ে শেষ করবেন৷
عن أبي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا شك أحدكم في صلاته فلم يدر كم صلى ثلاثا أم أربعا فليطرح الشك وليبن على ما استيقن ثم يسجد سجدتين.
(رواه مسلم: ٥٧١)
"হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা, থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নামাযে সন্দেহে পড়ে যায়, কয় রাকআত পড়েছে? তিন রাকআত না চার রাকআত? তখন সে যেন সন্দেহ ছুড়ে ফেলে নিশ্চিতের উপর নামাযের ভিত্তি রাখে (অর্থাৎ বেশি এবং কমের মধ্যে কমকে যেন প্রাধান্য দেয়) অতঃপর সাজদায়ে সাহু করে৷" (মুসলিম: ৫৭১)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫১ নিজের বিশেষ কোন ইবাদত লোকানোর জন্য মিথ্যা কথা বলা কি জায়েজ, যদি রিয়া হওয়ার আশংকা থাকে?
উত্তর: দেখুন, রিয়া যেমন কবীরা গোনাহ মিথ্যা বলাও কবীরা গোনাহ৷ কিন্তু মিথ্যা বলা কবীরা গোনাহর ভিত্তি বা মূল৷ তাছাড়া রিয়া এমন এক জিনিস, যা অন্তর থেকে দূর করা যায়৷ তাই এই কারণে মিথ্যা বলা জায়েয হবে না৷ বরং ওজর মনে হলে ইবাদত প্রকাশ করতে কোনো আপত্তি নেই৷ হাদীসে এসেছে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا دعي أحدكم إلى طعام وهو صائم فليقل: إني صائم.
(رواه مسلم: ١١٥٠).
"হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত, রাসূল সা, ইরশাদ করেন: তোমাদের কাউকে যদি খাবারের দাওয়াত করা হয় আর ওই লোক রোযাদার হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার৷" (সহীহ মুসলিম: ১১৫০)
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিমের অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা শিব্বীর আহমদ উসমানী রাহ, লেখেন:
وفى هذا الحديث أنه لا بأس بإظهار نوافل العبادة من الصوم والصلاة وغيرهما إذا دعت إليه حاجة. والمستحب إخفائها إذا لم تكن حاجة.
(فتح الملهم شرح صحيح مسلم: ٦/٢٣٦)
"এই হাদীস থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, প্রয়োজনের সময় নামায, রোযা ইত্যাদির মতো নফল ইবাদতসমূহ প্রকাশ করতে অসুবিধা নেই৷ যদিও প্রয়োজন ছাড়া ইবাদত লুকিয়ে রাখাই মুস্তাহাব৷" (ফতহুল মুলহিম: ৬/২৩৬)
তাছাড়া মিথ্যা বলার বৈধ কয়েকটি ক্ষেত্রের মধ্যে এই ক্ষেত্র পড়ে না৷ তাই এক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অনুমতি দেয়া যাবে না৷ যে কয়েকটি ক্ষেত্রে শরীয়ত মিথ্যা বলার বৈধতা দিয়েছে:
والكذب حرام إلا فى الحرب للخدعة وفى الصلح بين اثنين وفى رضاء الأهل وفى دفع الظالم عن الظلم، والمراد التعريض لأن عين الكذب حرام.
(مجمع الأنهر- ٤/٢٢١، كتاب الكراهية)
"মিথ্যা বলা হারাম৷ তবে (এরকম কয়েকটি ক্ষেত্রে জায়েয আছে যেমন-) যুদ্ধের ময়দানে শত্রু বাহিনীকে ধোকায় ফেলার জন্যে, দুই পক্ষের মাঝখানে মীমাংসা করার জন্যে, স্ত্রীর মনঃতুষ্টির জন্যে, নির্যাতনকারীর নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্যে মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অনুমতি আছে৷ তবে এখানে মিথ্যা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইঙ্গিতপূর্ণভাবে একটু ঘুরিয়ে কথা বলা৷ কেননা পরিষ্কার ও স্পষ্টভাবে মিথ্যা বলা তো হারাম৷" (মাজমাউল-আনহুর- ৪/২২১)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫২ প্রশ্ন: বিদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে ইসলামের বিধান কী?
উত্তর: শরীয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয় এমন রাষ্ট্রীয় আইন মানাও কিন্তু জনগণের জন্যে কর্তব্য৷ অন্তত নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে হলেও৷ কেননা রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে আইনি জটিলতায় পড়ে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে৷ অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
ولا تلقوا بأيديكم إلى التهلكة. (سورةالبقرة: 195)
নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না৷ (সূরা আল-বাকারা: ১৯৫)
হুন্ডি ব্যবসা রাষ্ট্রীয় আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং কঠিন দণ্ডনীয় অপরাধ৷ তাই এই ব্যবসায় জড়িত না হওয়াই সার্বিক দিক দিয়ে ভালো৷ তবে যেহেতু শরয়ী দৃষ্টিকোণে আপত্তিকর কিছু নেই, তাই এই ব্যবসার আয় হালাল হবে৷
فأما البون والكمبيالات والوثاق الأخرى التى يكتب عليها مبلغ الدين منذ يوم إجرائها فإن التعامل بها حوالة صحيحة بلا ريب، لأن الذي أصدرها قد كتب عليها أنى مدين لكل من يحملها بهذا المبلغ المعلوم.
(تكملة فتح الملهم: ٧/٤٨٣)
তাছাড়া কোনো ফকীহ হুন্ডি ব্যবসাকে মাকরূহ বলেছেন৷ যদিও মাকরূহ হওয়াটা জায়েযেরই অন্তর্ভুক্ত, তবুও যেহেতু অপছন্দনীয়; তাই বিরত থাকাই উত্তম৷ (শামী, কিতাবুল হাওয়ালা: ৮/১৭, মাহমূদিয়া: ২৫/২০০)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫৩ প্রশ্ন: শহীদমিনারে ফুল দেয়া কি শিরক?
উত্তর: দেখুন, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম৷ জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ের নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে৷ ইসলামে শহীদদের কবরে বা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের কোনো রীতি নেই৷ রাসূল সা, থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযামসহ ইসলামের সোনালী যুগে শহীদদের জন্যে ফুল দেয়ার কেনো রীতি ছিলো না৷ আর ইসলামে অনুমোদিত নয় এমন প্রত্যেক বিষয়ই পরিত্যাজ্য৷ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের সম্মানিত স্থাপনায় ফুল দিয়ে সম্মান জানায়৷ আমরা মুসলিম হয়েও তাদের ধর্মীয় উৎসবের ন্যায় যদি আমরাও কোনো স্থাপনায় ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি গ্রহণ করি, তাহলে সেটা অবশ্যই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বনের নামান্তর, যা হাদীসে সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ হাদীসে এসেছে:
عن ابن عمر رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: من تشبه بقوم فهو منهم.
"হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। " (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৩৫১২)
যারা ভাষার জন্যে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের জন্যে দুআ করা যেতে পারে৷ কিন্তু ভাষা শহীদদের জন্য তাও করা হয় না; যা করা হয় তার সাথে ইসলামের রীতির কোনো মিল নেই। হিন্দুরা প্রতিমা-পূজার পক্ষে এ যুক্তি পেশ করেন যে, দেবতা পূজারীদের নাগালের ভেতর নেই, তাই তার প্রতিমার মাধ্যমে তাঁকে পূজা দেওয়া হয়। শহীদ মিনারের বেলায়ও এ বিশ্বাস করা হয় যে, শহীদ মিনারকে সম্মান দেখানো ভাষা শহীদদেরকে শ্রদ্ধা করার সমতুল্য। যে সুস্পষ্টভাবে ভিন্ন ধর্মের অনুসরণ৷
তাই শহীদ মিনারকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠানকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখার দরকার আছে। ভাষা শহীদরা সবাই ছিলেন মুসলমান। কাজেই তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আমরা এমন কিছু করতে পারি না যা ইসলামী চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। তাছাড়া কোনো মুসলমানই তাওহীদ-বিরোধী কোনো কাজ করতে পারে না। তাই এসব কাজ হারাম এবং মারাত্মক কবীরা গোনাহ৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫৪ প্রশ্ন: আমি আজকে কাযা রোযা রেখেছি। কিন্তু সকাল বেলা মনে হল যে আমার এক জায়গায় আজ দাওয়াতে যাওয়ার কথা। আমি কি এই রোযা ভাঙতে পারব? নফল রোযার ভাঙার ক্ষেত্রেও কি একই আইন রয়েছে?
উত্তর: দাওয়াত কবুলের নিমিত্তে যেতে পারেন, কিন্তু যেহেতু ফরয রোযার কাযা করছেন, তাই দাওয়াত কবুলের জন্যে রোযা ভাঙা জায়েয হবে না৷ গিয়ে তাদের কাছে আপনার ওজর জানাবেন৷ তবে নফল রোযার ক্ষেত্রে যদি মনে করেন দাওয়াতকারী কষ্ট পাবেন, এমতাবস্থায় রোযা ভাঙার অবকাশ আছে৷ যদিও পরে তা কাযা করতে হবে৷ হাদীসে এসেছে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: إذا دعي أحدكم إلى طعام وهو صائم فليقل: إني صائم.
(رواه مسلم: ١١٥٠).
"হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত, রাসূল সা, ইরশাদ করেন: তোমাদের কাউকে যদি খাবারের দাওয়াত করা হয় আর ওই লোক রোযাদার হয়, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার৷" (সহীহ মুসলিম: ১১৫০)
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় সহীহ মুসলিমের অন্যতম ব্যাখ্যাকার আল্লামা শিব্বীর আহমদ উসমানী রাহ, লেখেন:
إن كان يشق على صاحب الطعام صومه استحب له الفطر وإلا فلا، هذا إذا كان صوم تطوع، فإن كان صوما واجبا حرم الفطر.
(فتح الملهم شرح صحيح مسلم: ٦/٢٣٦)
"রোযাদার যদি নফল রোযা রেখে থাকেন, আর যিনি দাওয়াত করেছেন, না খেলে তিনি কষ্ট পান, তাহলে রোযা ভাঙা মুস্তাহাব৷ কষ্ট মনে না নিলে রোযা ভাঙা মুস্তাহাব নয়৷ আর যদি ওয়াজিব (বা ফরয) রোযা হয়, তাহলে রোযা ভাঙা হারাম৷" (ফতহুল মুলহিম: ৬/২৩৬)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫৫ প্রশ্ন: কেউ যদি ইচ্ছাকৃত হোক আর অনিচ্ছাকৃত কোন গুনাহ করে এমনকি শিরক এর গুনাহ করে তারপর তওবার সব শর্ত মেনে তওবা করে তাহলে কি সে মাফ পাবে?
উত্তর: জ্বি, আল্লাহ দয়ালু, ক্ষমাশীল৷ সব শর্ত পূরণ করে তাওবা করলে আল্লাহ অবশ্যই মাফ করবেন৷ কারণ তিনি মাফ করবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
(سورة الزمر: ٥٣)
"আমার এই পয়গাম মানুষের কাছে পৌঁছে দিন- হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো গাফুরুর রাহীম।" (সূরা আয-যুমার: ৫৩)
তাছাড়া হাদীসে এসেছে:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: التَّائِبُ مِنْ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.
(رواه ابن ماجة: ٤٢٥٠، والطبراني في المعجم الكبير: ١٠٢٨١)
"রাসূল সা, ইরশাদ করেন: আপন গোনাহ থেকে তাওবাকারী এমনভাবে গোনাহমুক্ত হয়, যেন তার কোনো গোনাহই নেই৷" (ইবনু মাজাহ: ৪২৫০)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)



৫৬ প্রশ্ন: সালাতুত তাসবীহ পড়ার নিয়ম বলবেন প্লিজ???
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম৷
হাদীসেই খুব স্পষ্ট এবং বিস্তারিতভাবে সালাতুত তাসবীহের নিয়ম আলোচিত হয়েছে:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِلْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ: يَا عَبَّاسُ، يَا عَمَّاهُ، ” أَلَا أُعْطِيكَ، أَلَا أَمْنَحُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ، أَلَا أَفْعَلُ لَكَ عَشْرَ خِصَالٍ إِذَا أَنْتَ فَعَلْتَ ذَلِكَ، غَفَرَ اللَّهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَقَدِيمَهُ وَحَدِيثَهُ، وَخَطَأَهُ وَعَمْدَهُ، وَصَغِيرَهُ وَكَبِيرَهُ، وَسِرَّهُ وَعَلَانِيَتَهُ، عَشْرُ خِصَالٍ: أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُورَةٍ، فَإِذَا فَرَغْتَ مِنَ الْقِرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكْعَةٍ، قُلْتَ وَأَنْتَ قَائِمٌ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً، ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُ وَأَنْتَ رَاكِعٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ الرُّكُوعِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَهْوِي سَاجِدًا فَتَقُولُهَا وَأَنْتَ سَاجِدٌ عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَسْجُدُ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنَ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا، فَذَلِكَ خَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، تَفْعَلُ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، إِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تُصَلِّيَهَا فِي كُلِّ يَوْمٍ مَرَّةً فَافْعَلْ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَفِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي كُلِّ شَهْرٍ مَرَّةً، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَفِي عُمُرِكَ مَرَّةً“
"ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা! আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন? আর সে দশটি সৎ গুন হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ
"সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার"
এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার। আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন। যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার।" {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১২১৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৯৫}
দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহ্হুদ পড়ার জন্য বসবে তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বে তারপর তাশাহ্হুদ পড়বে। তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতের জন্য উঠবে। অতঃপর তৃতীয় রাকাত ও চতুর্থ রাকাতেও উক্ত নিয়মে উক্ত তাসবীহ পাঠ করবে। তাসবীর বাংলা উচ্চারণ হলো-“সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার”
কোন এক স্থানে উক্ত তাসবীহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই স্মরণ আসুক সেখানে তথাকার সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নিবে। আর এই নামাযে কোন কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবীহ পাঠ করতে হবে না। তাসবীহের সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের কর গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)




৫৭ প্রশ্ন: সুন্নাত ও নফল নামাযে শব্দ করে তেলাওয়াত করা যাবে কি? যুহর ও আসর এর ফরয নামাজ একা একা আদায়কালে কি শব্দ করে তেলাওয়াত করা যাবে?
(প্রশ্নটি করেছেন: এমাদ উদ্দিন মোহাম্মদ এমদাদ)
উত্তর: আস্তে কিরআতের নামাযে আস্তে কিরআত পড়া, জোরের জায়গায় জোরে কিরআত পড়া একাকী নামাযীর জন্যে ওয়াজিব নয়৷ তাই যুহর ও আসরের নামাযে জোরে কিরআত পড়লে নামায সহীহ হবে৷ সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না৷
والحاصل أن الجهر فى الجهرية لايجب على المنفرد إتفاقا وإنما الخلاف وجوب الإخفاء عليه فى السرية وظاهر الرواية عدم الوجوب.
(ردالمحتار: ٢/٥٤٥)
"মোটকথা, একাকী নামাযীর জন্যে জোরে কিরআতের নামাযে জোরে কিরআত পড়া সবার ঐক্যমতে ওয়াজিব নয়৷ মতভেদ হয়েছে একাকী নামাযীর জন্যে আস্তে কিরআতের নামাযে আস্তে কিরআত পড়া ওয়াজিব কী না? এ নিয়ে৷ তবে যাহিরুর রেওয়ায়াত তথা অগ্রগণ্য মতানুসারে ওয়াজিব নয়৷" (রদ্দুল মুহতার: ২/৫৪৫, হিন্দিয়া: ১/১২৮)
والله تعالي أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)






No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages