দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান - لا إله إلا الله محمد رسول الله

আপডেট তথ্য

Home Top Ad

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Wednesday, February 14, 2018

দৈনন্দিন জিজ্ঞাসাঃ শরয়ী সমাধান

বিয়ের মোহর কুরআন শিখানো!

প্রশ্ন: বিয়েতে অর্থ-সম্পদ দ্বারা মোহর দেয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা না দিয়ে কেবল কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে গণ্য করা যাবে কি?
অথবা আর্থিক মোহর দেয়ার পাশাপাশি কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে ধরা জায়েজ আছে কি?


•••••••••••••••••••
উত্তর:
মোহর স্ত্রীর অধিকার বা পাওনা। এটি আল্লাহর নির্দেশ। তাআলা বলেন:
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তবে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা: ৪)

💠 কী জিনিস দ্বারা মোহর দিতে হবে?
এ ব্যাপারে ফকীহগণ বলেছেন যে, মোহর হওয়ার জন্য শর্ত হল,
- সেটি হয় এমন জিনিস হতে হবে যার অর্থমূল্য রয়েছে। যেমন টাকা-পয়সা, স্বর্ণ-রৌপ্যের অলংকার, জায়গা-জমি,আসবাবপত্র ইত্যাদি।
- অথবা এমন কোন কাজ বা সেবা হতে হবে যার বিনিময় মূল্য রয়েছে। যেমন কুরআন শিখানো। বিয়ের পূর্বে এ মর্মে চুক্তি হবে যে, মোহর হিসেবে স্বামী তার স্ত্রীকে কুরআন শেখাবে। অথবা এ মর্মে চুক্তি হবে যে, সে তাকে পড়ালেখা শেখাবে অথবা স্বামী স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিশেষ কোন কর্ম সম্পাদন করবে।
বিয়ের সময় যদি এ ধরণের কাজ বা সেবা দানের শর্তে উভয়পক্ষ সম্মত হয় তাহলেও তা মোহর হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ এগুলোর বিনিময় মূল্য রয়েছে।
সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহ প্রার্থী এক দরিদ্র সাহাবীকে বললেন,
اذْهَبْ فَالْتَمِسْ وَلَوْ خَاتَمًا مِنْ حَدِيدٍ
“যাও, তালাশ কর, একটি লোহার আংটি হলেও।”
লোকটি চলে গেল এবং খুঁজে দেখল। এরপর এসে বলল,আমি কিছুই পেলাম না;এমনকি একটি লোহার আংটিও না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,তোমার কি কিছু কুরআন জানা আছে? সে বলল, অমুক অমুক সূরা আমার জানা আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তমার নিকট যে পরিমাণ কুরআন আছে তার বিনিময়ে এ মহিলাকে তোমার সাথে বিয়ে দিলাম।” (সহীহ বাখারী, অধ্যায়:পোশাক, অনুচ্ছেদ: লোহার আংটি, হা/৫৫৩৩, সহীহ মুসলিও বর্ণিত হয়েছে)
উক্ত হাদীস থেকে ইমাম শাফেঈ রহ. এবং ইমাম আহমদ রহ. (একটি বর্ণনা মোতাবেক) কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে গণ্য করেছেন।
বরং কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে গণ্য করার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেম একমত।

কিন্তু যদি শুধু কুরআনের সূরা বা আয়াতকে মোহর ধরা হয় অর্থাৎ বর নিজে নিজে কুরআন পড়বে অথবা কুরআন মুখস্থ করবে-এটাই মোহর। তবে এ বিষয়ে সঠিক কথা হল, এটি মোহর হিসেবে গণ্য হবে না। বরং কুরআন তিলাওয়াত শিখানো বা বিশেষ কোন কাজ করে দেয়ার শর্ত থাকলে তা মোহর হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

💠 অর্থ-সম্পদ থাকার পরও শুধু কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে গণ্য করা বৈধ নয়:
অর্থ-সম্পদ থাকার পরও শুধু কুরআন শিখানোকে মোহর হিসেবে গণ্য করা বৈধ হবে না। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি লোহার আংটি হলেও খোঁজার কথা বলেছেন।
সুতরাং আর্থিক মোহর দেয়ার সামর্থ্য থাকলে তাই প্রদান করতে হবে। অর্থ সম্পদ না থাকলে তখন তার জন্য উক্ত বিকল্প পথ। কিন্তু অর্থ-সম্পদ একেবারে না দিয়ে শুধু কুরআন শিখানোকেই মোহর হিসেবে ধার্য করা বৈধ হবে না।
তবে যদি আর্থিক মোহরের পাশাপাশি এটাও বলা হয় যে,স্বামী স্ত্রীকে কুরআন শেখাবে অর্থাৎ আর্থিক মোহর তো থাকলই পাশাপাশি কুরআনও শিখাতে হতে তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। এটিও মোহর হিসেবে পরিগণিত হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের সকলকে সঠিকভাবে দ্বীন জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমীন।
----------------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages