26 প্রশ্নঃ ফেসবুকের স্মাইলিগুলো ব্যাবহার করা কি হাদিসে বর্ণিত ছবি তৈরিকারী ব্যাক্তির মতো ক্ষমার অযোগ্য গুনাহ?
প্রশ্ন করেছেনঃ নিবির ফারহান
উত্তর: smile emoticon এ জাতীয় স্মাইলিগুলো ব্যবহারে কোনো অসুবিধা মনে করি না৷ কেননা এগুলো জন্তুর পূর্ণ আকৃতি বুঝা যায় না৷
أن الصور الصغيرة لايشملها تحريم الإقتناء والإستعمال…وقال صاحب الدر: هي التي لا تتبين تفاصيل أعضائها للناظر قائما وهي على الأرض. (الموسوعةالفقهية ١٢/١٢٢)
অর্থাৎ " আদ-দুররুল মুখতার-এর রচয়িতা বলেন- দর্শকের কাছে ছবির পূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যদি স্পষ্ট না হয়, তাহলে তা হারাম ছবি ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হবে না৷" (আল-মাউসূআ'তুল ফিকহিয়্যাহ ১২/১২২)
তবে পূর্ণ আকৃতি বুঝা যায় এমন স্মাইলি ব্যবহার করা যাবে না৷ কেননা হাদীসে জীব-জন্তুর আকৃতি তৈরীকারীর জন্যে কঠিন শাস্তির ঘোষণা এসেছে৷ রাসূলুল্লাহ সা, এর হাদীস-
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول : إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ الله يَوْمَ الْقِيَامَةِ المصُوِّرُونَ. (رواه البخاري: ٥٦٠٦ ومسلم: ٢١٠٩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে। (বুখারী: ৫৬০৬, মুসলিম: ২১০৯)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে। (বুখারী: ৫৬০৬, মুসলিম: ২১০৯)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
27 প্রশ্ন: কেউ যদি মাগরিবের দুই রাকাত নামাজ মিস করে শেষ রাকাতে জামাতে শরিক হয়, পরে কী সে দিতীয় রাকাতে তাশাহুদ পড়বে কী না| কারণ আমি কেউ কেউ কে তাশাহুদ পড়তে দেখি আবার কেউ তাশাহুদ না পড়ে উঠে যান আমার করনীয় কি?
প্রশ্ন করেছেনঃ অমি কাজী
প্রশ্ন করেছেনঃ অমি কাজী
উত্তর: দ্বিতীয় রাকআতে বসবেন এবং তাশাহহুদ পড়বেন৷ কারণ দ্বিতীয় রাকআতের পর বসা নিয়ম৷ তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকআতে তাশাহহুদ না পড়ে উঠে গেলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে৷ (ফাতাওয়া রাহমানিয়া ১/৩৩৩)
والله تعالى أعلم.
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
২৮ প্রশ্ন: আমরা অনেকে অনেক সময় ইসলামিক সংগীত শোনি।কিন্তু দেখা যায়,,অনেক সংগীতের মধ্যে আলাদা মিউজিক দেওয়া হয়। এই ধরনের সংগীত কি শোনা যাবে ?
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ রুবেল
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ রুবেল
উত্তর: দু’একটি ক্ষেত্রে শুধু দফ বাজানোর বিষয়টি ব্যতিক্রম থাকলেও যে কোনো বাদ্যযন্ত্রই হারাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস এবং সাহাবীদের বাস্তব আমল তা প্রমাণ করে। বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন। কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ? আমি বললাম হ্যাঁ। অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন। (মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনে মাজাহ হাদীস: ১৯০১)
একটু ভেবে দেখুন তো, যে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম মুহূর্তের জন্যও কানে তুলতে রাজি ছিলেন না সেই ইবলিসী আওয়াজের অনুকূলে কথা বলার দুঃসাহস আমরা দেখাতে পারি কি না? বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়? নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস: ৫২৩৭ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪)
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫)
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮ ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।-ফাতহুল বারী ৯/২২৬
দফ-এর পরিচয় যারা সরাসরি আরবে দফ দেখেছেন, তাদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।-মিরকাত ৬/২১০ এখন কেউ যদি বলেন, তৎকালীন যুগে দফ ছিল আরবের সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা-ই উন্নত হয়েছে। তাহলে একে অজ্ঞতাপ্রসূত অবাস্তব কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না। কেননা একাধিক হাদীসে ঢোল, তবলাসহ অনেক বাদ্যযন্ত্রের নাম এসেছে। বাস্তবে না থাকলে এসব বাদ্যযন্ত্রের নাম আসবে কোত্থেকে? তাছাড়া মুহাদ্দিসদের ভাষ্য অনুযায়ী দফ বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না, যা ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি। আরবে এখনো দফ বিদ্যমান আছে। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদানী উস্তাদকে ছাত্ররা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, দফ তো বাচ্চাদের জন্য, আর বড়দের জন্য হল কুরআন। পরিণত ব্যক্তিদের জন্য কুরআন ছেড়ে এসবের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এরপরও যদি মেনে নেওয়া হয় যে, তৎকালীন যুগে দফ সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র ছিল তবে তাতেই বা লাভ কী? বাদ্যযন্ত্রকে তো আর জায়েয বানানো যাচ্ছে না। হাদীসে রাসূলই তাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামকে আধুনিক বানানোর ‘সদুদ্দেশ্যে’ আজ কেউ কেউ ফতোয়া দিচ্ছেন যে, মেয়েদের সাথে হাত মেলানো জায়েয, নারী-পুরুষের মাঝে পর্দা বিধানের এত কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই, গান-বাদ্য, সিনেমা, টেলিভিশন এসব তো বিনোদনেরই অংশ। ক্লীন শেভে কোনো সমস্যা নেই, দাড়ি ইসলামের কোনো জরুরি বিষয় নয় ইত্যাদি বহুবিধ ‘আধুনিক’, ‘অতি আধুনিক’ ফাতাওয়া আজ শুনতে পাওয়া যায়। মনে রাখা উচিত যে, ইসলাম অন্যান্য ‘ধর্মে’র মতো নয়; বরং তা আল্লাহ প্রদত্ত চির আধুনিক আদর্শ, একে নিজেদের পক্ষ থেকে আরো অতি আধুনিক বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলামে যেমন বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই, তেমন ছাড়াছাড়িরও সুযোগ নেই। ইসলাম হল মধ্য পন্থা। যে বিধান যতটুকু দেওয়া প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তা ততটুকুই দিয়েছেন। এর পূর্ণ অনুসরণই যে সকল কল্যাণের সূত্র সাহাবায়ে কেরামের পুণ্যযুগই তার বাস্তব প্রমাণ। আমরাও যদি কল্যাণের প্রত্যাশা করি তাহলে আমাদেরকেও ইসলামের সকল বিধানের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে এবং আমাদের ঈমান, আমল ও ফতোয়া সবকিছুকে যাচাই করতে হবে তাদেরই মানদণ্ডে।
আমরা কেউ তো এ দাবি করতে পারি না যে, সাহাবীদের চেয়ে ইসলামকে ও রাসূলের হাদীসকে চেষ্টা করে আমরা বেশি বুঝে ফেলেছি। বাদ্যসহ কাওয়ালি সুফী সাধকের নাম ব্যবহারকারী একটি জগতেও আজ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই আধুনিক কিছু সুফী বলে থাকে, বাদ্যসহ যিকির ও কাওয়ালি জায়েয। দলীল হিসেবে তারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ বর্ণিত দুটি বালিকার দফ বাজিয়ে কবিতা গাওয়ার হাদীসটি উপস্থাপন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. লেখেন, উক্ত হাদীসে আয়েশা রা.-এর বর্ণনাই তাদের অবাস্তব দাবির বিরুদ্ধে উৎকৃষ্ট জবাব। গান-বাদ্য যে নাজায়েয এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হাদীসের রাবী হযরত আয়েশা রা. বলছেন, উক্ত বালিকাদ্বয় কোনো গায়িকা ছিল না। তারা কোনো গান গায়নি।-ফাতহুল বারী ২/৪৪২ ইমাম কুরতুবী রাহ. বলেন, গান বলতে যা বুঝায়, বালিকাদ্বয় তা গায়নি। পাছে কেউ ভুল বুঝতে পারে তাই আয়েশা রা. বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ইমাম কুরতুবী আরো বলেন, বর্তমানে একশ্রেণীর সুফীরা যে ধরনের গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম।-তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫৪ বিখ্যাত সাধক হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহ. তার যুগে কাওয়ালি শোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে কাওয়ালি শোনার শর্তগুলো পালন করা হয় না। তাই আমি এর থেকে তওবা করছি।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৯২
জুনাইদ বাগদাদী রাহ.-এর যুগেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের যুগের অবস্থা কেমন হবে তা ভাববার বিষয়। এক বিদ্বান ব্যক্তি একটি শিক্ষণীয় উক্তি করেছিলেন যে, তোমরা আধুনিক হও ভালো কথা, কিন্তু আধুনিক হতে গিয়ে মনুষ্যত্বের সীমানা অতিক্রম করো না এবং শয়তানের দোসর বনে যেও না৷ (মাসিক আল-কাউসার ডিসেম্বর ২০০৯ থেকে সংক্ষেপিত)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
একটু ভেবে দেখুন তো, যে আওয়াজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম মুহূর্তের জন্যও কানে তুলতে রাজি ছিলেন না সেই ইবলিসী আওয়াজের অনুকূলে কথা বলার দুঃসাহস আমরা দেখাতে পারি কি না? বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবায়ে কেরাম বরদাশত করতেন না। তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়? নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না। অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস: ৫২৩৭ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি, বাজা, ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র। সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪)
মৃদু আওয়াজের ঘণ্টি-ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের বিধান কী হবে তা খুব সহজেই বুঝা যায়। গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ.-অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সকলেই গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে।-কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক।
তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক। তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। (ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫)
হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী। আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮ ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন। কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে।-জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয়।-ফাতহুল বারী ৯/২২৬
দফ-এর পরিচয় যারা সরাসরি আরবে দফ দেখেছেন, তাদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, দফ-এর এক পাশ খোলা। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না। আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭ আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।-মিরকাত ৬/২১০ এখন কেউ যদি বলেন, তৎকালীন যুগে দফ ছিল আরবের সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র, বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তা-ই উন্নত হয়েছে। তাহলে একে অজ্ঞতাপ্রসূত অবাস্তব কথা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারি না। কেননা একাধিক হাদীসে ঢোল, তবলাসহ অনেক বাদ্যযন্ত্রের নাম এসেছে। বাস্তবে না থাকলে এসব বাদ্যযন্ত্রের নাম আসবে কোত্থেকে? তাছাড়া মুহাদ্দিসদের ভাষ্য অনুযায়ী দফ বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না, যা ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি। আরবে এখনো দফ বিদ্যমান আছে। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সুদানী উস্তাদকে ছাত্ররা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, দফ তো বাচ্চাদের জন্য, আর বড়দের জন্য হল কুরআন। পরিণত ব্যক্তিদের জন্য কুরআন ছেড়ে এসবের মধ্যে লিপ্ত হওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এরপরও যদি মেনে নেওয়া হয় যে, তৎকালীন যুগে দফ সর্বোচ্চ বাদ্যযন্ত্র ছিল তবে তাতেই বা লাভ কী? বাদ্যযন্ত্রকে তো আর জায়েয বানানো যাচ্ছে না। হাদীসে রাসূলই তাকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামকে আধুনিক বানানোর ‘সদুদ্দেশ্যে’ আজ কেউ কেউ ফতোয়া দিচ্ছেন যে, মেয়েদের সাথে হাত মেলানো জায়েয, নারী-পুরুষের মাঝে পর্দা বিধানের এত কড়াকড়ির প্রয়োজন নেই, গান-বাদ্য, সিনেমা, টেলিভিশন এসব তো বিনোদনেরই অংশ। ক্লীন শেভে কোনো সমস্যা নেই, দাড়ি ইসলামের কোনো জরুরি বিষয় নয় ইত্যাদি বহুবিধ ‘আধুনিক’, ‘অতি আধুনিক’ ফাতাওয়া আজ শুনতে পাওয়া যায়। মনে রাখা উচিত যে, ইসলাম অন্যান্য ‘ধর্মে’র মতো নয়; বরং তা আল্লাহ প্রদত্ত চির আধুনিক আদর্শ, একে নিজেদের পক্ষ থেকে আরো অতি আধুনিক বানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলামে যেমন বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই, তেমন ছাড়াছাড়িরও সুযোগ নেই। ইসলাম হল মধ্য পন্থা। যে বিধান যতটুকু দেওয়া প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তা ততটুকুই দিয়েছেন। এর পূর্ণ অনুসরণই যে সকল কল্যাণের সূত্র সাহাবায়ে কেরামের পুণ্যযুগই তার বাস্তব প্রমাণ। আমরাও যদি কল্যাণের প্রত্যাশা করি তাহলে আমাদেরকেও ইসলামের সকল বিধানের পূর্ণ অনুসরণ করতে হবে এবং আমাদের ঈমান, আমল ও ফতোয়া সবকিছুকে যাচাই করতে হবে তাদেরই মানদণ্ডে।
আমরা কেউ তো এ দাবি করতে পারি না যে, সাহাবীদের চেয়ে ইসলামকে ও রাসূলের হাদীসকে চেষ্টা করে আমরা বেশি বুঝে ফেলেছি। বাদ্যসহ কাওয়ালি সুফী সাধকের নাম ব্যবহারকারী একটি জগতেও আজ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। তাই আধুনিক কিছু সুফী বলে থাকে, বাদ্যসহ যিকির ও কাওয়ালি জায়েয। দলীল হিসেবে তারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ বর্ণিত দুটি বালিকার দফ বাজিয়ে কবিতা গাওয়ার হাদীসটি উপস্থাপন করে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. লেখেন, উক্ত হাদীসে আয়েশা রা.-এর বর্ণনাই তাদের অবাস্তব দাবির বিরুদ্ধে উৎকৃষ্ট জবাব। গান-বাদ্য যে নাজায়েয এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হাদীসের রাবী হযরত আয়েশা রা. বলছেন, উক্ত বালিকাদ্বয় কোনো গায়িকা ছিল না। তারা কোনো গান গায়নি।-ফাতহুল বারী ২/৪৪২ ইমাম কুরতুবী রাহ. বলেন, গান বলতে যা বুঝায়, বালিকাদ্বয় তা গায়নি। পাছে কেউ ভুল বুঝতে পারে তাই আয়েশা রা. বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ইমাম কুরতুবী আরো বলেন, বর্তমানে একশ্রেণীর সুফীরা যে ধরনের গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম।-তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫৪ বিখ্যাত সাধক হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহ. তার যুগে কাওয়ালি শোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে কাওয়ালি শোনার শর্তগুলো পালন করা হয় না। তাই আমি এর থেকে তওবা করছি।-আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৯২
জুনাইদ বাগদাদী রাহ.-এর যুগেরই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের যুগের অবস্থা কেমন হবে তা ভাববার বিষয়। এক বিদ্বান ব্যক্তি একটি শিক্ষণীয় উক্তি করেছিলেন যে, তোমরা আধুনিক হও ভালো কথা, কিন্তু আধুনিক হতে গিয়ে মনুষ্যত্বের সীমানা অতিক্রম করো না এবং শয়তানের দোসর বনে যেও না৷ (মাসিক আল-কাউসার ডিসেম্বর ২০০৯ থেকে সংক্ষেপিত)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
29 প্রশ্ন: তামাশা করার মাস'আলা কি? বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে, এমনকি যারা মারা গেছেন। কিংবা খেলোয়াড় আভিনেতা/অভিনেত্রীদের নিয়ে। আমার প্রশ্ন তাদের খারাপ কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করার প্রেক্ষিতে নয়, বরং ব্যক্তিকে নিয়ে ঠাট্টা করার প্রেক্ষিতে।
প্রশ্ন করেছেনঃ সাহেল মাহমুদ
প্রশ্ন করেছেনঃ সাহেল মাহমুদ
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম৷ কাউকেই তামাশা করা, ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা জায়েয নয়৷ এটা ইসলামের শিক্ষাও নয়, আদর্শও নয়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন-
يا أيهاالذين آمنوا لايسخر قوم من قوم عسي أن يكونوا خيرا منهم ـ (سورة الحجرات: ١١)
يا أيهاالذين آمنوا لايسخر قوم من قوم عسي أن يكونوا خيرا منهم ـ (سورة الحجرات: ١١)
"হে মু'মিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে৷ কেননা সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে৷" (সূরা আল-হুজুরাত ১১) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে মা'আরেফুল কুরআনে বলা হয়েছে- "কুরতুবী বলেন: কোন ব্যক্তিকে হেয় ও অপমান করার জন্যে তার কোন দোষ এমনভাবে উল্লেখ করা, যাতে শ্রুতারা হাসতে থাকে, তাকে سخرية، تمسخر বা استهزاء বলা হয়৷ এটা যেমন মুখে সম্পন্ন হয়, তেমনি হস্তপদ ইত্যাদি দ্বারা ব্যঙ্গ অথবা ইঙ্গিতের মাধ্যমেও সম্পন্ন হয়ে থাকে৷ কারও কথা শুনে অপমানের ভঙ্গিতে বিদ্রূপ করার মাধ্যমেও হতে পারে৷ কেউ কেউ বলেন, শ্রুতাদের হাসির উদ্রেক করে, এমনভাবে কারও সম্পর্কে আলোচনা করাকে سخرية ও تمسخر বলা হয়৷ কুরআনের বর্ণনা মতে এগুলো সব হারাম৷" (মা'আরেফুল কুরআন)
পুনরায় জিজ্ঞসাঃ অমুসলিমের ক্ষেত্রেও কি একই বিধান প্রযোজ্য হবে?
উত্তর: জ্বি৷ অমুসলিমকে ইসলামের আদর্শ দেখাতে হবে না? তাছাড়া অমুসলিমদের মধ্যে যারা জিম্মি, তাদেরকে মুখের মাধ্যমে কষ্ট না দেয়ার কথা তো সরাসরি হাদীসের মধ্যে এসেছে৷
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من سمع يهودياً أو نصرانياً فله النار. (رواه ابن حبان فى صحيحه) "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ইহুদী অথবা নাসারাদের (যারা জিম্মি) আঘাত করে কথা বলবে, তার শাস্তি জাহান্নাম৷" (সহীহ ইবনে হিব্বান)
তামাশা করা, উপহাস করা এসব গীবতের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই তামাশা করা গীবতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে৷
قال ابن حجر الهيتمي: سئُل الغزالي في فتاويه عن غيبة الكافر، فقال: هي في حق المسلم محذورة لثلاث علل: الإيذاء وتنقيص خلق الله، فإن الله خالق لأفعال العباد، وتضييع الوقت بما لا يعني، قال: والأولى تقتضي التحريم، والثانية الكراهة، والثالثة خلاف الأولى. وأما الذمي فكالمسلم فيما يرجع إلى المنع من الإيذاء. (ردالمحتار: ٤/١٧١)
أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: من سمع يهودياً أو نصرانياً فله النار. (رواه ابن حبان فى صحيحه) "রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ইহুদী অথবা নাসারাদের (যারা জিম্মি) আঘাত করে কথা বলবে, তার শাস্তি জাহান্নাম৷" (সহীহ ইবনে হিব্বান)
তামাশা করা, উপহাস করা এসব গীবতের অন্তর্ভুক্ত৷ তাই তামাশা করা গীবতের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে৷
قال ابن حجر الهيتمي: سئُل الغزالي في فتاويه عن غيبة الكافر، فقال: هي في حق المسلم محذورة لثلاث علل: الإيذاء وتنقيص خلق الله، فإن الله خالق لأفعال العباد، وتضييع الوقت بما لا يعني، قال: والأولى تقتضي التحريم، والثانية الكراهة، والثالثة خلاف الأولى. وأما الذمي فكالمسلم فيما يرجع إلى المنع من الإيذاء. (ردالمحتار: ٤/١٧١)
"ইবনে হাজার হাইতামী রাহ, বলেন, ইমাম গাযালী রাহ,কে কাফিরের গীবত করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, কোনো মুসলমান সম্পর্কে গীবত করা তিন কারণে নিষিদ্ধ৷ এক, অপর মুসলমান ভাইকে কষ্ট দেয়া৷ দুই, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে হেয় এবং তুচ্ছ করা৷ তিন, অনর্থক কাজে সময় নষ্ট করা৷ প্রথম কারণে হারাম সাব্যস্ত করে৷ দ্বিতীয় কারণে মাকরূহ সাব্যস্ত করে৷ তৃতীয় কারণে (কাজটি) অনুত্তম প্রমাণিত হয়৷ অতএব কোনো জিম্মিকে কষ্ট না দেয়ার হুকুমের বেলায় মুসলমানদের মতোই৷" (রদ্দুল মুহতার: ৪/১৭১)
এরপর ইমাম গাযালী বলেন-
قال الغزالي: وأما الحربي فليس بمحرم على الأولى، ويكره على الثانية والثالثة.
"কোনো হারবী ব্যক্তির গীবত করা প্রথম কারণে হারাম নয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কারণে মাকরূহ হবে৷"
এরপর ইমাম গাযালী বলেন-
قال الغزالي: وأما الحربي فليس بمحرم على الأولى، ويكره على الثانية والثالثة.
"কোনো হারবী ব্যক্তির গীবত করা প্রথম কারণে হারাম নয়, তবে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কারণে মাকরূহ হবে৷"
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৩০ প্রশ্ন: কিবলা দিকে নামাজ পড়া কি ফরয, আমাদের মসজিদটি ক্যাম্পাস ব্যাবহার করে দেখা যায় কিবলা থেকে বেশ বাঁকা এখন করনিও কি?
প্রশ্ন করেছেনঃ মোহাম্মাদ ফারহান হুসেইন
প্রশ্ন করেছেনঃ মোহাম্মাদ ফারহান হুসেইন
উত্তর: কিবলা থেকে সামান্য বাঁকা হলে কোনো অসুবিধা নেই, নামায সহীহ হবে৷ আর যদি এতটুকু বাঁকা হয় যে, কিবলা থেকে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত মুখ ফিরে যায় এবং এই দিককে আর পশ্চিম দিক বলা যায় না, তাহলে নামায সহীহ হবে না৷ দিক নতুন করে ঠিক করে নিতে হবে৷ তবে হুবহু কিবলার 'প্রতি' মুখ করা জরুরী নয়, কিবলার 'দিক' ঠিক থাকলেই হবে৷ আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ. (سورةالبقرة: ١٥٠)
"অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।" (সূরা আল-বাকারা: ১৫০)
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين المشرق والمغرب قبلة. (رواه الترمذي: ٣٤٢، ٣١٤، ٣١٣)
"হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যবর্তী দিকই হলো কিবলা৷" (তিরমিযী ৩১৩, ৩১৪, ৩৪২)
যেহেতু মদীনা থেকে কা'বা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত, তাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্যে রাসূল সা, একথা বলেছেন৷ আমাদের কিবলা যেহেতু পশ্চিম দিকে, তাই আমাদের কিবলার হুকুম হলো, উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যবর্তী দিক৷ তাই সামান্য বাঁকা হলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ. (سورةالبقرة: ١٥٠)
"অতএব তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখমণ্ডল ফিরিয়ে নাও। এবং তোমরা যেখানেই আছ তোমাদের মুখ সে দিকেই প্রত্যাবর্তিত কর।" (সূরা আল-বাকারা: ১৫০)
عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما بين المشرق والمغرب قبلة. (رواه الترمذي: ٣٤٢، ٣١٤، ٣١٣)
"হযরত আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যবর্তী দিকই হলো কিবলা৷" (তিরমিযী ৩১৩, ৩১৪, ৩৪২)
যেহেতু মদীনা থেকে কা'বা দক্ষিণ দিকে অবস্থিত, তাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্যে রাসূল সা, একথা বলেছেন৷ আমাদের কিবলা যেহেতু পশ্চিম দিকে, তাই আমাদের কিবলার হুকুম হলো, উত্তর এবং দক্ষিণের মধ্যবর্তী দিক৷ তাই সামান্য বাঁকা হলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৩১ প্রশ্ন: দূর থেকে আয়াতুল কুরসি,৩ ক্কুল পড়ে কাউকে ফু দেয়া যাতে তিনি বিপদ থেকে ইনশা আল্লাহ রক্ষা পান-- শরিয়তের দৃষ্টিতে এ সম্পর্কে জানতে চাই.....
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ ইউনুস
প্রশ্ন করেছেনঃ আহমেদ ইউনুস
উত্তর: শারীরীক সমস্যার জন্যে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছে শরীয়ত৷ নিম্নের দুআসহ অনেক দুআই হাদীসে আছে, যেগুলো পড়ে ফুঁক দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ নিম্নের দুআ পড়ে হযরত জিবরীল আ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দম করেছিলেন-
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ إِذَا اشْتَكَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وآله وسلم، رَقَاهُ جِبْرِيلُ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ. (رواه مسلم: ٢١٨٥)
কিন্তু বিপদাপদ থেকে বাঁচানোর শক্তি একমাত্র আল্লাহর৷ আয়াতুল কুরসী আর ৩ ক্বুল বিপদাপদ থেকে বাঁচাবে, এমনটা বিশ্বাস করা মারাত্মক আকিদাগত ভ্রান্তি৷ ঈমানের জন্যে ক্ষতির কারণ৷
ইবনে তাইমিয়া রাহ, বলেন-
يجوز أن يكتب للمصاب وغيره من المرضى شيئا من كتاب الله وذكره بالمداد المباح ويغسل ويسقى كما نص على ذلك أحمد وغيره. ( مجموع فتاوى ابن تيمية ٤/١٨٧)
"বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জয়েজ।" (মাজমূ'আ ফাতাওয়া ৪/১৮৭)
এখন কেউ যদি দূর থেকে ফুঁক দেয় এবং রুগী সুস্থতা অনুভব করে, তাহলে তো এখানে শরয়ীভাবে আপত্তির কোনো কারণ দেখি না৷ তবে সর্বাবস্থায় অন্তরে এই বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, সুস্থ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ إِذَا اشْتَكَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وآله وسلم، رَقَاهُ جِبْرِيلُ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ. (رواه مسلم: ٢١٨٥)
কিন্তু বিপদাপদ থেকে বাঁচানোর শক্তি একমাত্র আল্লাহর৷ আয়াতুল কুরসী আর ৩ ক্বুল বিপদাপদ থেকে বাঁচাবে, এমনটা বিশ্বাস করা মারাত্মক আকিদাগত ভ্রান্তি৷ ঈমানের জন্যে ক্ষতির কারণ৷
ইবনে তাইমিয়া রাহ, বলেন-
يجوز أن يكتب للمصاب وغيره من المرضى شيئا من كتاب الله وذكره بالمداد المباح ويغسل ويسقى كما نص على ذلك أحمد وغيره. ( مجموع فتاوى ابن تيمية ٤/١٨٧)
"বিপদগ্রস্ত বা অসুস্থ লোকদের জন্য কালি দ্বারা আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর জিকর লিখে দেয়া এবং ধুয়ে পান করা জয়েজ।" (মাজমূ'আ ফাতাওয়া ৪/১৮৭)
এখন কেউ যদি দূর থেকে ফুঁক দেয় এবং রুগী সুস্থতা অনুভব করে, তাহলে তো এখানে শরয়ীভাবে আপত্তির কোনো কারণ দেখি না৷ তবে সর্বাবস্থায় অন্তরে এই বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, সুস্থ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
৩২ প্রশ্ন পশিম দিকে পা দিয়ে শুয়ে থাকার ব্যাপারে ইসলামের আইন কি? এটা কি গুনাহর মধ্যে পরে?
প্রশ্ন করেছেনঃ সামী মিয়াদাদ চৌধুরী
প্রশ্ন করেছেনঃ সামী মিয়াদাদ চৌধুরী
উত্তর: ১. ক্বিবলার দিকে পা প্রসারিত করে ঘুমানো মাকরুহে তাহরীমী। যে ব্যক্তি জেনে-শুনে ইচ্ছা করে এরকম করে সে ফাসিক, তার সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। "দুররুল মুখতার" ও " রদ্দুল মুহতারে বলা হয়েছে-
مد رجليه فى نوم او غيرها اى عمدا لانه اساءة ادب. قال فى الشامية: تحت قوله: "لانه اساءة ادب" افاد ان الكراهة تنزيهية لكن .......فى باب الاستنجاء انه سياتى ان يمد الرجل اليها ترد شهادته قال: وهذا يقتضى التحريم. ( الدر مع الرد: ١/٦١٣. مطلب فى مكروهات الصلاة)
অর্থাৎ, ঘুমন্ত বা অন্য কোন অবস্থায় উভয় পা ইচ্ছাবশত: ক্বিবলার দিকে করা শিষ্টাচার বহির্ভূত। শামী রাহ: বলেন, শিষ্টাচার বহির্ভূত কথা দ্বারা মনে হচ্ছে এটা মাকরূহে তানযিহী। কিন্তু ইস্তেঞ্জা অধ্যায়ে সামনে (কিতাবের সামনের আলোচনায়) আসছে যে, কিবলার দিকে যে ( ইচ্ছা করে) পা ছড়িয়ে রাখে তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা হবে। এর দ্বারা বুঝা যায় এটা মাকরূহে তাহরিমী। (শামী: ১/৬১৩. ফাতাওয়া রহিমিয়া: ৫/২৫)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
33 প্রশ্ন: কোরআন বাংলা অর্থ এবং হাদিস নিজে নিজে শিখতে কোন বাধা আছে নাকি না আলেমদের কাছ থেকে শেখাটা আবশ্যক?
প্রশ্ন করেছেনঃইমতিয়াজ আহমেদ
প্রশ্ন করেছেনঃইমতিয়াজ আহমেদ
উত্তর: নিজে নিজে শিখলে পদস্খলন হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রবল৷ তাছাড়া অর্থ উল্টো বুঝে মারাত্মক বিভ্রান্তিতে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে৷ তাই তো আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যে রাসূল সা, কে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করে একথাই বুঝিয়েছেন যে, শিক্ষা লাভ করতে হলে শিক্ষকের প্রয়োজন৷
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم، يتلو عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة، وان كانوا من قبل لفى ضلال مبين. (سورة آل عمران- ١٦٤)
"আল্লাহ মুমিনদের ওপর বড়ই দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।" (সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)
দেখুন, এখানে বলা হয়েছে- ويعلمهم الكتاب والحكمة 'তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেন।’ অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মতের জন্যে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে৷ যে সাহাবায়ে কেরাম উচ্চমার্গের আরবী ভাষা-ভাষী ছিলেন, সেই সাহাবায়ে কেরামকে রাসূল সা, কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন, তাহলে আমরা যারা আরবী ভাষী নই, আরবী ভাষা সম্পর্কে আমরা মোটামুটি অজ্ঞ; এমতাবস্থায় আমরা কীভাবে নিজে নিজে অর্থ পড়ে কুরআন বুঝব? অবশ্যই শিক্ষকের প্রয়োজন৷ নিজে নিজে বুঝতে গেলেই বিভ্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে৷
এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী (দা,বা,) বলেন-
"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্যাবলির মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে কিতাবুল্লাহ শিক্ষাদান। এ উদ্দেশ্যের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ويعلمهم الكتاب ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদেরকে কিতাবের তালীম বা শিক্ষা দেন।’ কিতাবের তালীম দ্বারা কী উদ্দেশ্য? শুধু আয়াতের অনুবাদ বলে দিবেন? তিনি তো শিক্ষা দিবেন আবু বকর, উমর, উসমান, আলী রা.কে। তারা কি আরবী ভাষা জানেন না? এঁদের প্রত্যেকেই তো আরবী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। হযরত উমর ফারুক রাযিআল্লাহু আনহু আরবী ভাষায় এত দক্ষ ছিলেন যে, বড় বড় সাহিত্যিক পর্যন্ত তাঁর সামনে নিজেদের ‘কালাম’ পেশ করলে তা সংশোধন করতেন। আরবের মহিলারাও তো ছিলেন স্বভাবকবি। অপরদিকে কুরআনের ঘোষণা بلسان عربى مبين ‘কুরআন স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ তাহলে তো আরবী ভাষা শিক্ষা করার জন্য বা কুরআনের অর্থ বুঝার জন্য তাঁদের কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু দেখা যায়, এরপরও আল্লাহ পাক আরবী ভাষীদের কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী প্রেরণ করেছেন। এ থেকে বুঝা গেল যে, কেবল অনুবাদ পড়ে নিলে অথবা শুধু আরবী ভাষা জেনে নিলে কিতাবুল্লাহর বুঝ ও কুরআনের ইলম অর্জন হয় না; বরং কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে কোনো শিক্ষক বা মুরবিবর অবশ্যই প্রয়োজন।" (মাসিক আল-কাউসার, অক্টোবর-২০১২)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم، يتلو عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة، وان كانوا من قبل لفى ضلال مبين. (سورة آل عمران- ١٦٤)
"আল্লাহ মুমিনদের ওপর বড়ই দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।" (সূরা আলে-ইমরান: ১৬৪)
দেখুন, এখানে বলা হয়েছে- ويعلمهم الكتاب والحكمة 'তাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেন।’ অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মতের জন্যে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে৷ যে সাহাবায়ে কেরাম উচ্চমার্গের আরবী ভাষা-ভাষী ছিলেন, সেই সাহাবায়ে কেরামকে রাসূল সা, কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন, তাহলে আমরা যারা আরবী ভাষী নই, আরবী ভাষা সম্পর্কে আমরা মোটামুটি অজ্ঞ; এমতাবস্থায় আমরা কীভাবে নিজে নিজে অর্থ পড়ে কুরআন বুঝব? অবশ্যই শিক্ষকের প্রয়োজন৷ নিজে নিজে বুঝতে গেলেই বিভ্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে৷
এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম তাকী উসমানী (দা,বা,) বলেন-
"রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্যাবলির মধ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে কিতাবুল্লাহ শিক্ষাদান। এ উদ্দেশ্যের বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ويعلمهم الكتاب ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিনদেরকে কিতাবের তালীম বা শিক্ষা দেন।’ কিতাবের তালীম দ্বারা কী উদ্দেশ্য? শুধু আয়াতের অনুবাদ বলে দিবেন? তিনি তো শিক্ষা দিবেন আবু বকর, উমর, উসমান, আলী রা.কে। তারা কি আরবী ভাষা জানেন না? এঁদের প্রত্যেকেই তো আরবী ভাষায় দক্ষ ছিলেন। হযরত উমর ফারুক রাযিআল্লাহু আনহু আরবী ভাষায় এত দক্ষ ছিলেন যে, বড় বড় সাহিত্যিক পর্যন্ত তাঁর সামনে নিজেদের ‘কালাম’ পেশ করলে তা সংশোধন করতেন। আরবের মহিলারাও তো ছিলেন স্বভাবকবি। অপরদিকে কুরআনের ঘোষণা بلسان عربى مبين ‘কুরআন স্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে।’ তাহলে তো আরবী ভাষা শিক্ষা করার জন্য বা কুরআনের অর্থ বুঝার জন্য তাঁদের কোনো শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু দেখা যায়, এরপরও আল্লাহ পাক আরবী ভাষীদের কুরআন শিক্ষা দেওয়ার জন্য নবী প্রেরণ করেছেন। এ থেকে বুঝা গেল যে, কেবল অনুবাদ পড়ে নিলে অথবা শুধু আরবী ভাষা জেনে নিলে কিতাবুল্লাহর বুঝ ও কুরআনের ইলম অর্জন হয় না; বরং কুরআনকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে কোনো শিক্ষক বা মুরবিবর অবশ্যই প্রয়োজন।" (মাসিক আল-কাউসার, অক্টোবর-২০১২)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
34 প্রশ্ন: অনেকসময় বাসায় মহিলারা একা থাকেন। এ ক্ষেত্রে কি তাদের বাসায় একা রেখে মসজিদে জামাতে নামায আদায় করা যাবে? মানে এ ক্ষেত্রে জামাত ছাড়া যাবে কি না?
প্রশ্ন করেছেনঃ তাওহিদ আবদুল্লাহ
প্রশ্ন করেছেনঃ তাওহিদ আবদুল্লাহ
উত্তর: জ্বি, নিজের পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে জামাত ছাড়া যাবে৷ ফিকহের কিতাবে জামাত রহিত হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে এই কারণটিও বিবৃত হয়েছে৷ দেখুন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ. (سورةالحج ٧٨)
অর্থাৎ "তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেন নি৷" (সূরা আল-হাজ্ব ৭৮)
روى ابن عباس- رضي الله عنهما- أن النبي- صلى الله عليه وسلم - قال: من سمع النداء، فلم يمنعه من اتباعه عذر، قالوا: وما العذر يا رسول الله؟ قال: خوف أو مرض، لم تقبل منه الصلاة التي صلى. (رواه أبو داود برقم ٤٦٤)
হযরত ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা, ইরশাদ করেন, নামাযের আহবান (আযান) শুনবে অথচ নামাযে আসতে তার কোনো ওযর থাকবে না, (এরপরও যদি জামাআতে না এসে একা একা পড়ে) তাহলে তার নামায কবুল হবে না৷ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওযর কী ধরণের? রাসূলুল্লাহ সা, বললেন 'ভয়' অথবা 'অসুস্থতা'৷ (আবু দাঊদ ৪৬৪)
قال ابن قدامة فى المغني: الخوف في ثلاثة أنواع: خوف على النفس، وخوف على المال، وخوف على الأهل. (المغني ١٣٦٤)
ইবনে কুদামাহ রাহ, বলেন, 'ভয়' তিন প্রকারের হয়ে থাকে৷ এক, নিজের প্রাণের ভয়৷ দুই, নিজের সম্পদের ভয়৷ তিন, নিজের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার ভয়৷ (আল-মুগনী ১৩৬৪)
তাহলে বুঝা গেলো, পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তাজনিত ভয়ও জামাআতে শামিল না হওয়ার পক্ষে একটি ওযর৷ তাই এরকম ভয় যদি থাকে, তখন জামাআত ত্যাগের অনুমতি রয়েছে৷
আবার প্রশ্ন: হযরত "নিরাপত্তা" একটু ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলবেন কি নরমালি যেটা দেখা যায় , বাসায় আম্মু একা থাকেন , কিন্ত তখন ত নিরাপত্তা কোন প্রয়োজন হয় না , কারন জামাত ছারা আরও অনেক সময় যখন আমরা স্কুল কলেজে যাই তখন ও একাই থাকেন আমি জামাতে যাই , আর বিপদ ত যে কোন সময় ই আসতে পারে এই ওসীলায় কি জামাত তরক যাবে কি না
উত্তর: ফিকহের কিতাবে যে ভয়ের কথা এসেছে, তা হচ্ছে দুশমনের ভয়, ডাকাতের ভয়, ইজ্জত-আব্রু হারানোর ভয়৷ এমন ভয় যদি না থাকে, যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন, তাহলে জামাত ত্যাগ করা যাবে না৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ. (سورةالحج ٧٨)
অর্থাৎ "তিনি ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা রাখেন নি৷" (সূরা আল-হাজ্ব ৭৮)
روى ابن عباس- رضي الله عنهما- أن النبي- صلى الله عليه وسلم - قال: من سمع النداء، فلم يمنعه من اتباعه عذر، قالوا: وما العذر يا رسول الله؟ قال: خوف أو مرض، لم تقبل منه الصلاة التي صلى. (رواه أبو داود برقم ٤٦٤)
হযরত ইবনে আব্বাস রা, থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা, ইরশাদ করেন, নামাযের আহবান (আযান) শুনবে অথচ নামাযে আসতে তার কোনো ওযর থাকবে না, (এরপরও যদি জামাআতে না এসে একা একা পড়ে) তাহলে তার নামায কবুল হবে না৷ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ওযর কী ধরণের? রাসূলুল্লাহ সা, বললেন 'ভয়' অথবা 'অসুস্থতা'৷ (আবু দাঊদ ৪৬৪)
قال ابن قدامة فى المغني: الخوف في ثلاثة أنواع: خوف على النفس، وخوف على المال، وخوف على الأهل. (المغني ١٣٦٤)
ইবনে কুদামাহ রাহ, বলেন, 'ভয়' তিন প্রকারের হয়ে থাকে৷ এক, নিজের প্রাণের ভয়৷ দুই, নিজের সম্পদের ভয়৷ তিন, নিজের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার ভয়৷ (আল-মুগনী ১৩৬৪)
তাহলে বুঝা গেলো, পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তাজনিত ভয়ও জামাআতে শামিল না হওয়ার পক্ষে একটি ওযর৷ তাই এরকম ভয় যদি থাকে, তখন জামাআত ত্যাগের অনুমতি রয়েছে৷
আবার প্রশ্ন: হযরত "নিরাপত্তা" একটু ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলবেন কি নরমালি যেটা দেখা যায় , বাসায় আম্মু একা থাকেন , কিন্ত তখন ত নিরাপত্তা কোন প্রয়োজন হয় না , কারন জামাত ছারা আরও অনেক সময় যখন আমরা স্কুল কলেজে যাই তখন ও একাই থাকেন আমি জামাতে যাই , আর বিপদ ত যে কোন সময় ই আসতে পারে এই ওসীলায় কি জামাত তরক যাবে কি না
উত্তর: ফিকহের কিতাবে যে ভয়ের কথা এসেছে, তা হচ্ছে দুশমনের ভয়, ডাকাতের ভয়, ইজ্জত-আব্রু হারানোর ভয়৷ এমন ভয় যদি না থাকে, যেখানে নিরাপত্তার প্রশ্ন, তাহলে জামাত ত্যাগ করা যাবে না৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
35 প্রশ্ন: (১) ছবি তোলা কি হারাম? (২) আমার চশমার ফ্রেমের এক কোনায় ছোট একটা পুমার (ব্রান্ড) ছবি আছে। এই অবস্থায় চশমা নিয়ে কি আমি মসজিদে প্রবেশ করতে পারব?
উত্তর: ওয়ালাইকুমুস সালাম৷
১, ছবি তোলা বিষয়ক মূল মাসআলা হলো, বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েয নয়, হারাম; এটাই মূল মাসআলা৷ রাসূলুল্লাহ সা, এর হাদীস-
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ الله يَوْمَ الْقِيَامَةِ المصُوِّرُونَ. (رواه البخاري: ٥٦٠٦ ومسلم: ٢١٠٩)
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা, বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে।" (বুখারী ৫৬০৬, মুসলিম ২১০৯)
১, ছবি তোলা বিষয়ক মূল মাসআলা হলো, বিনা প্রয়োজনে ছবি তোলা জায়েয নয়, হারাম; এটাই মূল মাসআলা৷ রাসূলুল্লাহ সা, এর হাদীস-
عن عبد الله بن مسعود رضي الله عنه قال سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ الله يَوْمَ الْقِيَامَةِ المصُوِّرُونَ. (رواه البخاري: ٥٦٠٦ ومسلم: ٢١٠٩)
"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা, বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি ছবি তোলে বা আঁকে।" (বুখারী ৫৬০৬, মুসলিম ২১০৯)
২, চশমায় লাগানো ছবি যদি মনুষ্য আকৃতি বা কোনো জন্তুর আকৃতি হয়, তাহলে এই ছবি নিয়ে মসজিদে প্রবেশ জায়েয হবে না৷ (ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২২/৩৬৫)
والله تعالى أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
والله تعالى أعلم
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
36 প্রশ্ন: আমাদের হানাফি মাযহাবে ঈদের ছয় তাকবিরের দলিল জানতে চাচ্ছি।
উত্তর: এখানে শুধু ছয় তাকবীরের দু'টি দলীল পেশ করা হলো:
১. কাসেম আবূ আব্দির রহমান র. বলেন-
حدثني بعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم قال صلى بنا النبي صلى الله عليه و سلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف قال لا تنسوا كتكبير الجنائز وأشار بأصابعه وقبض إبهامه. (أخرجه الطحاوي في شرح معاني الآثار ٢/٤٠٠) من طريق عبد الله بن يوسف عن يحيى بن حمزة عن الوضين بن عطاء عنه. قال الطحاوي: فهذا حديث حسن الإسناد وعبد الله بن يوسف ويحيى بن حمزة والوضين والقاسم كلهم أهل رواية معروفون بصحة الرواية ليس كمن روينا عنه الآثار الأول فان كان هذا الباب من طريق صحة الإسناد يؤخذ فان هذا أولى ان يؤخذ به مما خالفه غيره.
অর্থ: "আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন নামায পড়লেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ভুলে যেয়োনা, জানাযার তাকবীরের মতো। এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।" (তাহাবী শরীফ, ২খ, ৪০০ পৃ)
বর্ণিত হাদীসের সনদকে ইমাম তাহাবী রাহ. হাসান বলেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীসের মত। (সূত্র: তাদরীবুর রাবী, ১/৯৬ পৃ )।
এর বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে হামযা, ওয়াদীন (وضين) ও কাসেম সকলেই হাদীস বর্ণনাকারী, সহীহ বর্ণনা পেশ করার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ।
২ . মাকহুল রাহ. বলেন- أخبرنى أبو عائشة جليس لأبى هريرة ان سعيد بن العاص سال أبا موسى الأشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يكبر فى الأضحى والفطر فقال أبو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز. فقال حذيفة صدق. فقال أبو موسى كذلك كنت أكبر فى البصرة حيث كنت عليهم. وقال أبو عائشة وأنا حاضر سعيد بن العاص. (أخرجه أبو داود: ١١٥٣ وسكت عنه هو والمنذري ورواه أحمد في مسنده: ٤/٤١٦ وابن أبي شيبة: ٥٧٤٤)
অর্থ: "হযরত আবূ হুরায়রা রা. এর একজন সঙ্গী আবূ আয়েশা র. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল আস রা. (কুফার গভর্নর) এসে হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় কিভাবে তাকবীর দিতেন? আবূ মূসা রা. বললেন, তিনি জানাযার মতো চার তাকবীর দিতেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আবূ মূসা সঠিক বলেছেন। আবূ মূসা রা. বললেন, আমি যখন বসরার গভর্নর ছিলাম তখন এভাবেই তাকবীর দিতাম। আবূ আয়েশা রাহ. বলেন, এসময় আমি সাঈদ ইবনুল আসের কাছে উপস্থিত ছিলাম।"
আবূ দাউদ শরীফ (১১৫৩), মুসনাদে আহমাদ ৪খ, ৪১৬পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং (৫৭৪৪) ইমাম আবূ দাউদ র. ও মুনযিরী র. দুজনই এই হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন।
এতে প্রতীয়মান হয় যে হাদীসটি তাদের নিকট আমলযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। নীমাবী র. বলেছেন, এর সনদ হাসান । (দ্র. আসারুস সুনান, ৩১৪ পৃ)
উল্লেখ্য, এই দুটি হাদীসে প্রথম রাকাতের তাকবীরে তাহরীমাসহ এবং ২য় রাকাতের রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর উল্লেখ করা হয়েছে। (সূত্র: দলীলসহ নামাযের মাসায়েল) (সংক্ষিপ্ত করার স্বার্থে এখানে শুধু দু'টি দলীল পেশ করা হয়েছে৷ যদিও আরো অনেক দলীল কিতাবাদীতে বিদ্যমান৷)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
১. কাসেম আবূ আব্দির রহমান র. বলেন-
حدثني بعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم قال صلى بنا النبي صلى الله عليه و سلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف قال لا تنسوا كتكبير الجنائز وأشار بأصابعه وقبض إبهامه. (أخرجه الطحاوي في شرح معاني الآثار ٢/٤٠٠) من طريق عبد الله بن يوسف عن يحيى بن حمزة عن الوضين بن عطاء عنه. قال الطحاوي: فهذا حديث حسن الإسناد وعبد الله بن يوسف ويحيى بن حمزة والوضين والقاسم كلهم أهل رواية معروفون بصحة الرواية ليس كمن روينا عنه الآثار الأول فان كان هذا الباب من طريق صحة الإسناد يؤخذ فان هذا أولى ان يؤخذ به مما خالفه غيره.
অর্থ: "আমাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন সাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের দিন নামায পড়লেন এবং চারটি করে তাকবীর দিলেন। নামায শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, ভুলে যেয়োনা, জানাযার তাকবীরের মতো। এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।" (তাহাবী শরীফ, ২খ, ৪০০ পৃ)
বর্ণিত হাদীসের সনদকে ইমাম তাহাবী রাহ. হাসান বলেছেন। আর হাসান হাদীস গ্রহণযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীসের মত। (সূত্র: তাদরীবুর রাবী, ১/৯৬ পৃ )।
এর বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে হামযা, ওয়াদীন (وضين) ও কাসেম সকলেই হাদীস বর্ণনাকারী, সহীহ বর্ণনা পেশ করার ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ।
২ . মাকহুল রাহ. বলেন- أخبرنى أبو عائشة جليس لأبى هريرة ان سعيد بن العاص سال أبا موسى الأشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله -صلى الله عليه وسلم- يكبر فى الأضحى والفطر فقال أبو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز. فقال حذيفة صدق. فقال أبو موسى كذلك كنت أكبر فى البصرة حيث كنت عليهم. وقال أبو عائشة وأنا حاضر سعيد بن العاص. (أخرجه أبو داود: ١١٥٣ وسكت عنه هو والمنذري ورواه أحمد في مسنده: ٤/٤١٦ وابن أبي شيبة: ٥٧٤٤)
অর্থ: "হযরত আবূ হুরায়রা রা. এর একজন সঙ্গী আবূ আয়েশা র. আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, সাঈদ ইবনুল আস রা. (কুফার গভর্নর) এসে হযরত আবূ মূসা আশআরী রা. ও হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা.কে জিজ্ঞেস করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় কিভাবে তাকবীর দিতেন? আবূ মূসা রা. বললেন, তিনি জানাযার মতো চার তাকবীর দিতেন। তখন হুযায়ফা রা. বললেন, আবূ মূসা সঠিক বলেছেন। আবূ মূসা রা. বললেন, আমি যখন বসরার গভর্নর ছিলাম তখন এভাবেই তাকবীর দিতাম। আবূ আয়েশা রাহ. বলেন, এসময় আমি সাঈদ ইবনুল আসের কাছে উপস্থিত ছিলাম।"
আবূ দাউদ শরীফ (১১৫৩), মুসনাদে আহমাদ ৪খ, ৪১৬পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং (৫৭৪৪) ইমাম আবূ দাউদ র. ও মুনযিরী র. দুজনই এই হাদীসের উপর নীরবতা অবলম্বন করেছেন।
এতে প্রতীয়মান হয় যে হাদীসটি তাদের নিকট আমলযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য। নীমাবী র. বলেছেন, এর সনদ হাসান । (দ্র. আসারুস সুনান, ৩১৪ পৃ)
উল্লেখ্য, এই দুটি হাদীসে প্রথম রাকাতের তাকবীরে তাহরীমাসহ এবং ২য় রাকাতের রুকুর তাকবীর সহ চার তাকবীর উল্লেখ করা হয়েছে। (সূত্র: দলীলসহ নামাযের মাসায়েল) (সংক্ষিপ্ত করার স্বার্থে এখানে শুধু দু'টি দলীল পেশ করা হয়েছে৷ যদিও আরো অনেক দলীল কিতাবাদীতে বিদ্যমান৷)
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
37 কবরের ছবি তোলা কি জায়েজ?
প্রশ্ন করেছেনঃ মাহতাব খান
প্রশ্ন করেছেনঃ মাহতাব খান
উত্তর: যেহেতু প্রাণহীন বস্তুর ছবি তোলা জায়েয, তাই কবরের ছবি তুলতে আপত্তির কিছু মনে হয় না৷ তবে যেহেতু কবর আখেরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি জায়গা, তাই না তোলাই উত্তম৷ তবে কবরকে যদি আলাদা সম্মান প্রদর্শনের জন্যে মাযার হিসেবে ছবি উঠিয়ে ঘরে লটকানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে ফাসিদ নিয়তের কারণে প্রাণহীন হলেও ছবি উঠানো জায়েয হবে না৷
عن عمر بن الخطاب رضـ قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول انما الاعمال بالنيات. (رواه البخارى: ١ ومسلم: ١٩٠٧)
অর্থ: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই আমলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল (বুখারী: ১, মুসলিম: ১৯০৭)
عن عمر بن الخطاب رضـ قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول انما الاعمال بالنيات. (رواه البخارى: ١ ومسلم: ١٩٠٧)
অর্থ: হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, নিশ্চয়ই আমলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়তের ওপর নির্ভরশীল (বুখারী: ১, মুসলিম: ১৯০৭)
পুনরায় জিজ্ঞাসা: যদি কোন বিদেশ বসবাস কারী ম্রত বেক্তির মরা মুখ দেখতে চান রাহলে কি করিনয়
উত্তর: মৃত ব্যক্তির ছবি তোলা আরো কঠোরভাবে নিষেধ৷
قال أصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام شديدالتحريم. (مرقاة ٤/٤٨٣)
মোল্লা আলী ক্বারী রাহ, বলেন- "আমাদের (মাযহাবের) ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেছেন, প্রাণীর আকৃতির ছবি তোলা মারাত্মক রকমের হারাম৷" (মিরকাত ৪/৪৮৩)
বিদেশে বসবাসকারী আত্মীয় মৃত ব্যক্তির মুখ দেখতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ একান্ত যদি দেখতেই হয় এবং মৃত ব্যক্তি পুরুষ হন বা মহিলা হলে মাহরাম হন, তখন স্কাইপি, ভাইবার, ইমো কিংবা ট্যাঙ্গো প্রভৃতির সাহায্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে৷ তাছাড়া মৃত ব্যক্তির মুখ দেখা তো জরুরি কোনো বিষয় নয়৷ বরং দেখতে নিরুৎসাহিত করা উচিত৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
قال أصحابنا وغيرهم من العلماء تصوير صورة الحيوان حرام شديدالتحريم. (مرقاة ٤/٤٨٣)
মোল্লা আলী ক্বারী রাহ, বলেন- "আমাদের (মাযহাবের) ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেছেন, প্রাণীর আকৃতির ছবি তোলা মারাত্মক রকমের হারাম৷" (মিরকাত ৪/৪৮৩)
বিদেশে বসবাসকারী আত্মীয় মৃত ব্যক্তির মুখ দেখতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই৷ একান্ত যদি দেখতেই হয় এবং মৃত ব্যক্তি পুরুষ হন বা মহিলা হলে মাহরাম হন, তখন স্কাইপি, ভাইবার, ইমো কিংবা ট্যাঙ্গো প্রভৃতির সাহায্যে ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখানো যেতে পারে৷ তাছাড়া মৃত ব্যক্তির মুখ দেখা তো জরুরি কোনো বিষয় নয়৷ বরং দেখতে নিরুৎসাহিত করা উচিত৷
والله تعالى أعلم.
উত্তর প্রদানেঃ হাফেয মুফতি জিয়া রাহমান (দাঃ বাঃ)
No comments:
Post a Comment